মধ্য রাতে ঢাকার হাতিরঝিল এলাকা থেকে দুই বান্ধবীকে নিয়ে তিন বন্ধু মাওয়া যাচ্ছিলেন। মাতাল থাকায় তিন বন্ধুই বেপরোয়া গতি দিয়ে উল্টাপাল্টা মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন।রাত ২টার দিকে তারা শ্রীনগর উপজেলার উমপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক ব্যারিকেডে ধাক্কা খান।
এতে তিন বন্ধুর পাশাপাশি আহত হন এক বান্ধবী। আরেক বান্ধবী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। জানা যায় নিহত তরুণীর নাম বৃষ্টি, বয়স ২৭। পিবিআই বৃষ্টির ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরিচয় বের করতে পারেনি।এ ছাড়া গ্রেপ্তার রবিন ও তার বাকি দুই বন্ধু এবং তাদের আরেক বান্ধবী আহত জান্নাতুল ফেরদৌসও (২৭) বৃষ্টির বাসার ঠিকানা বা বাবা মায়ের তথ্য দিতে পারছে না। তারা পুলিশকে জানিয়েছে, হাতিরঝিল এলাকাতেই বৃষ্টির সঙ্গে তাদের পরিচয়। এর বাইরে তারা কিছুই জানে না। তবে বাড্ডা এলাকায় বৃষ্টির বাসা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
দুর্ঘটনার পর উপায়ন্তর না পেয়ে তিন বন্ধু আহত ও নিহত বান্ধবীকে ঘটনাস্থলে রেখে পদ্মা সেতু দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পোশাকে রক্ত ও মাতলামো দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করলেও বান্ধবীদের কথা এড়িয়ে যান। পুলিশ তাদের শ্রীনগর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। কিছুক্ষণ পরে সেখানে নেয়া হয় আহত বান্ধবীকে।
সেই বান্ধবীর তথ্যমতেই আটক করা হয় তিন বন্ধুকে। আটককৃতদের মধ্যে এস এম মাহমুদুল আহসান রবিন (২৯)কে পুলিশ সড়ক পরিবহন আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আর বাকি দুই বন্ধু মোশারফ হোসেন (৩২) ও সুমন (৩২)কে অবৈধভাবে পদ্মা সেতু পার হওয়ার জন্য জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছে। এদিকে সোমবার রাতে মদ্যপ রবিনের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে নিহত বৃষ্টি’র (২৭) পরিচয় এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বৃষ্টির মরদেহ পড়ে আছে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) মর্গে। পুলিশ বলছে মর্গে পড়ে থাকা বৃষ্টির খোঁজ নিতে এখনো কেউ আসেনি।এ ছাড়া আহত জান্নাতুল ফেরদৌসকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তাকে সেখানেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিহত ও আহত নারীকে উদ্ধার করে পুলিশের একটি দল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার এস আই জহিরুল ইসলাম বলেন, রবিনকে শ্রীনগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, রবিনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সড়ক ও পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। পরে তাকে মুন্সীগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। রবিন হাজারীবাগ এলাকার ২০/২১,বি/১ গনকটুলির বাসিন্দা। তার বাবার নাম এসএম শাহজাহান। তিনি ঢাকার হিসাবরক্ষণ অফিসের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
রবিন ২ বছর আগে বিয়ে করেছে। শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহিয়া জানান, রাত ৩টার দিকে দুর্ঘটনায় আহত নারীকে হাঁসাড়া হাইওয়ে থেকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসে। একই সময় পদ্মা সেতু উত্তর থানা পুলিশ ৩ যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ৩ যুবকই মদ্যপ অবস্থায় ছিল।
পরে ওই নারী ওই যুবকদের দেখিয়ে বলে তারা তাদেরকে দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে রেখে পালিয়ে এসেছে। পরে পুলিশ তাদেরকে আটক করে। পুলিশ জানায়, রবিনের মোটরসাইকেলে ওই দুই বান্ধবী ছিল। তার ছেলে বন্ধুরা আগে ও সে পেছন পেছন মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল। পেছনে থাকা রবিনের গাড়িটি দ্রুতগতিতে সড়ক ব্যারিকেডে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বান্ধবীদের একজন নিহত ও আরেকজন আহত হয়।
নিহত বৃষ্টির পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের কর্মকর্তারা ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাই করেও তার পরিচয় পাননি। তাই বৃষ্টির লাশ ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আহত জান্নাতুল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জান্নাতুল জানিয়েছে, হাতিরঝিলে পরিচয়ের সূত্র ধরেই তারা বান্ধবী। এ কারণে নিহত বৃষ্টির পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কে কিছু বলতে পারছে না।