কোভিড মহামারীর অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি এক কঠিন সময় পার করছে। আকাশচুম্বী হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম, দেশে দেশে ঊর্ধ্বমুখী মুদ্রাস্ফীতি। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভুগছে জনগণ। খুব শিগগিরই যে এই অবস্থার উন্নতি হবে, তেমনটা ভাবা যে বোকামি হবে তা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।
তিনি বলেছেন, ২০২২ সাল কঠিন যাচ্ছে। ২০২৩ সাল আরও কঠিনতর হতে চলেছে। এরই মধ্যে কোভিড মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জোড়া আঘাতের মধ্যে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার বর্ধিত ঝুঁকির মুখোমুখি।গত ১৩ জুলাই নিজের ব্লগে ‘ফেসিং অ্যা ডার্কেনিং ইকোনমিক আউটলুক : হাউ দ্য জি২০ ক্যান রেসপন্ড’ শীর্ষক এক লেখায় ক্রিস্টালিনা এসব কথা বলেন।
ক্রিস্টালিনা নিজের লেখায় উল্লেখ করেছেন, আসছে দিনগুলোয় বিশ্ব অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা প্রবল। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়েই প্রবৃদ্ধির খাতে এমন ভাটার টান। এ ছাড়াও তাকে ভাবাচ্ছে, চীনের মতো বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তির প্রবৃদ্ধি থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি। চীনের অর্থনৈতিক শ্লথতা গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও ধীরগতির করে তুলতে পারে। তার সরাসরি প্রভাব পড়বে জি২০ দেশগুলোর ওপর।
খাদ্য নিরাপত্তার আশঙ্কার কথাও ঘুরেফিরে এসেছে ক্রিস্টালিনার ব্লগে। সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়লে, বা মুদ্রাস্ফীতির হার আকাশ ছুঁলে, বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া দেশে খাদ্য সংকট মাথাচাড়া দেবে। তা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে জি২০ দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
লেখায় তিনি আগামী আর্থিক বছরে বিশ্ব অর্থনীতিকে যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির কথা। এই মুদ্রাস্ফীতির দৈত্যকে বোতলবন্দি করাই এখন আইএমএফের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি। ক্রিস্টালিনা সব দেশের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন মুদ্রাস্ফীতিকে লাগাম পরাতে
চেষ্টার কসুর না করে। কারণ অতিমারী বিধ্বস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন যুদ্ধের অভিঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম, তখন মুদ্রাস্ফীতি প্রতিনিয়ত অনুঘটকের কাজ করে চলেছে। পূর্বাভাস বলছে, উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা ২০২২-এ ৫.৭ শতাংশ হবে এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোতে তা পৌঁছবে ৮.৭ শতাংশে। এক্ষেত্রে ক্রিস্টালিনার বার্তা, এটি রুখতে যা করার এখনই করতে হবে।