নাটোরে অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু,উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ৯জন

নাটোরের লালপুর উপজেলার দেলুয়া গ্রামে অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা রোগের উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন একই গ্রামের আরও নয়জন। তাঁদের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ আছে।জরুরি ভিত্তিতে ওই গ্রামের ৩০০ পশুকে আজ শনিবার অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া হয়েছে। 

উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম দুলাল হোসেন (৫৫)। তিনি উপজেলার রুইগাড়ি গ্রামের আইয়ুব সরদারের ছেলে। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন একই গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫), ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২১), মহিদুল ইসলামের স্ত্রী রুমা বেগম (৩৫), ওমর আলীর ছেলে আবদুল মজিদ (৪০), সাখাওয়াত হোসেন (৩০), আরজেদ প্রামাণিকের ছেলে আফতাব আলী (৫০), মৃত দুলাল হোসেনের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩০), রূপচান্দ আলীর ছেলে মোহন আলী (৪০) ও নুরুজ্জামানের স্ত্রী বিলকিস বেগম (৩২)।

সংক্রমণের খবর পেয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিনিধিদলের ঘটনাস্থলে আসার কথা। তাঁরা রোববার সকালে দেলুয়া গ্রাম পরিদর্শন করে রোগের নমুনা সংগ্রহ করবেন। একই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে গ্রামের নয়জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দেন। বর্তমানে তাঁরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জেলা সিভিল সার্জন, লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেলুয়া গ্রামের মহিদুল ইসলামের একটি গর্ভবতী গাভি অসুস্থ হয়ে পড়লে ৭ জুলাই কসাই আজাহার সরদারকে দিয়ে নিজ বাড়িতে জবাই করানো হয়। গরু জবাই করার কাজে সংশ্লিষ্ট থাকা ব্যক্তিরা ও জবাই করা গরুর মাংস খেয়েছেন, এমন কিছু লোক ওই রাত থেকে অসুস্থ হতে শুরু করেন। ওই রাতেই অসুস্থ দুলাল হোসেনকে স্থানীয় একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে এই ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি চিকিৎসক দল আজ শনিবার ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধিদলের প্রধান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগতত্ত্ব ও রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের চিকিৎসক ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ঘটনাটি তাঁরা ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রায়হান আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক শারমিন আক্তার জানান, তিনি দুলাল হোসেনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ দেখতে পান এবং তাৎক্ষণিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রাতেই দুলালকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ জুলাই রাতে দুলাল মারা যান।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার সরকার বলেন, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের জন্য তাঁরা শনিবার ওই গ্রামের ৩০০ গবাদিপশুকে টিকা দিয়েছেন।নাটোরের সিভিল সার্জন রোজী আরা জানান, চিকিৎসকেরা অসুস্থ ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাতে রোগীরা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর প্রকৃত ঘটনা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম শাহাব উদ্দিন বলেন, অ্যানথ্রাক্সের কারণ এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এটি মাটির নিচে বহু বছর বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষা মৌসুমে মাটির নিচ থেকে ওপরে উঠে আসে। গরু, ছাগল, মহিষ বা ভেড়া ঘাস খাওয়ার সময় শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর গবাদিপশু দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ধরনের অসুস্থ প্রাণীর মাংস নাড়াচাড়া করলে বা খেলে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

উপজেলা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি ওই অসুস্থ গরুটিকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন। এ সময় তাঁর কাছেও মনে হয়েছিল গরুটি অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ছিল। উপসর্গ হিসেবে গরুটির লোম খাড়া ছিল, দেহের তাপমাত্রা ছিল ১০৬ ডিগ্রির বেশি। নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

Exit mobile version