আষাঢ় শেষ হয়ে আজ থেকে শুরু হয়েছে শ্রাবণ মাস। অথচ বৃষ্টির দেখা নেই। তীব্র রোদে বীজতলায় শুকিয়ে যাচ্ছে আমন ধানের চারা। পানির অভাবে চারা রোপণের জন্য জমি তৈরি করা যাচ্ছে না। যেসব জমি ইতিমধ্যে আবাদ করা হয়েছে, তা ফেটে চৌচির।
নওগাঁর সর্বত্র চলছে পানির জন্য হাহাকার। পতিত রয়েছে অনেক জমি। কেউ কেউ বিকল্প সেচের মাধ্যমে আমনের চারা রোপণ করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্যমাত্রার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। বাকি জমি শুকিয়ে আছে।
দামপুরা গ্রামের কৃষক আব্দুর হাই জানান, সেচসংকটে তাঁর সাত বিঘা আউশের খেত ফেটে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনাবৃষ্টির কারণে তিনি এখন পর্যন্ত আমনের মাঠ প্রস্তুত করতে পারেননি।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমীর আব্দুল্লাহ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অনাবৃষ্টি চললেও আমন চাষে এখনো যথেষ্ট সময় আছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে কৃষকেরা চারা রোপণ করে ফেলবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নাটোরে অনাবৃষ্টি আর খরতাপে চারা উৎপাদনের জন্য বীজ বপন করা যাচ্ছে না। যেখানে ইতিমধ্যে চারা গজিয়েছে, সেগুলো শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক মখলেছুর রহমান জানান, ‘অনাবৃষ্টির ফলে আমনের বীজ বপনই করতে পারছেন না।
কামারদহ গ্রামের এসকেন্দার আলী বলেন, ‘ছয় বিঘা জমিতে আমন চাষ করব বলে বীজ বপন করেছিলাম। কিন্তু খরায় মাটি শুকিয়ে চারা মারা যাচ্ছে।’ এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা বলেন, বর্ষা মৌসুমে এমন অনাবৃষ্টি কল্পনাও করা যায় না। এ সময় বৃষ্টি না হলে আমন উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।
দিনাজপুরে পানির অভাবে খাঁখাঁ করছে মাঠঘাট। আমন রোপণের সময় বিলম্ব হয়ে পড়ছে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে নলকূপের পানি দিয়ে চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।সুজাপুর গ্রামের কৃষক দুলাল রায় বলেন, বীজতলা প্রস্তুত কিন্তু পানির অভাবে জমিতে চারা রোপণ করতে পারছেন না তিনি।
আমন রোপণে দেরি হলে ফলন কম হবে। তাই হয়তো বিকল্প সেচ দিয়ে চারা লাগাতে হবে। তাতে খরচ বেশি পড়বে। আরেক কৃষক আশিস রঞ্জন দাস বলেন, তিনি শ্যালো মেশিন প্রস্তুত করেছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে আমন ধানের জমি তৈরি এবং রোপণ শুরু করবেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সোহানুর রহমান বলেন, অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে কৃষকদের সামান্য অসুবিধা হলেও তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। এখনো সময় আছে। যদি দু-এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হয়, তবে প্রয়োজনে গভীর নলকূপগুলো চালু করার জন্য বলা হবে।
নীলফামারীতে বৃষ্টির অভাবে অনেক আমনখেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কোথাও কৃষকেরা শ্যালো মেশিন বসিয়ে খেতে সেচ দিচ্ছেন। উত্তর দুরাকুটি হাড়িবেচাপাড়া গ্রামের শাহেদুল বলেন, আগাম বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় এখন আর বৃষ্টির দেখা মিলছে না।
এতে তাঁর পাঁচ বিঘা জমির আমন ধান নষ্টের উপক্রম হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ফসল রক্ষায় সেচ দিচ্ছেন।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে দু-এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি নামবে। দাবদাহ মোকাবিলা করে আমন চাষে কৃষকদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিচ্ছেন।