রাজধানীর বড় মগবাজারে নিজস্ব ফ্ল্যাট থেকে মঙ্গলবার রাতে ইকবাল উদ্দিন আহমেদ (৭২) নামের এক চিকিৎসকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি সৌদি আরবে অর্থোপেডিক সার্জন ছিলেন। আট বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর আর চিকিৎসাপেশায় যুক্ত হননি।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাতে বড় মগবাজার ২২৭ নম্বর গ্র্যান্ড প্লাজার সাততলার নিজ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
রমনা থানা–পুলিশ জানায়, ইকবাল উদ্দিনের স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে ১৫ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে যান। মগবাজারে নিজেদের ফ্ল্যাটে ইকবাল উদ্দিন একাই ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ভবনটির কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীরা মাসিক সার্ভিস চার্জ নিতে গেলে ওই চিকিৎসকের বাসার কলাপসিবল গেট তালা লাগানো অবস্থায় পান।
এ সময় ওই ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। তাঁরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে রমনা থানা–পুলিশ ইকবালের স্বজনদের উপস্থিতিতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে তাঁর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
সিদ্ধেশ্বরী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মোফিজুর রহমান জানান, মৃতের স্ত্রী-মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন। তাদের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে তার কোনো যোগাযোগ হচ্ছিল না। ৯৯৯-এ ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাতে ওই বাসা থেকে ডা. ইকবাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার মরদেহে পোকা ধরে গেছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এ বিষয়ে ইকবাল উদ্দিনের একমাত্র মেয়ের জামাই আরিফুর রহমান সিদ্দীক জানান, মেয়েকে নিয়ে মৃতের স্ত্রী হাবিবা বেগম সৌদি আরব থাকেন। ডা. ইকবাল উদ্দিনও সেখানে ছিলেন। এর আগে দুইবার স্ট্রোক করায় পাঁচ-ছয় বছর আগে তিনি দেশে চলে আসেন। এরপর থেকে বড় মগবাজারের ওই নিজ ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি।
আরিফ জানান, সবশেষ দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রী-মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে তার। এরপর থেকে ফোনের রিং হলেও আর যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তারা। মঙ্গলবার বাড়ির কেয়ারটেকার সার্ভিস চার্জের জন্য ওই বাসায় গিয়ে তাকে অনেক ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পরে বিষয়টি স্বজনদের জানান।
এরপর থানা পুলিশকে জানালে তারা দরজা ভেঙে ভেতর থেকে তার গলিত পোকা ধরা মরদেহ উদ্ধার করে। বাসার বাথরুমে উপুড় হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পুলিশের ধারণা, অসুস্থার কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার। তবে বেশ কয়েকদিন ধরে ওভাবে পড়ে থাকায় মরদেহে পচন ধরেছে।
ইকবাল উদ্দিন একজন চিকিৎসক ছিলেন। তার স্ত্রী-সন্তান-জামাই সৌদি আরবে থাকেন। ছয় বছর আগে প্রবাস থেকে ফিরে তিনি বড় মগবাজারের নিজের ফ্ল্যাটে একা বসবাস শুরু করেন। হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে একা বসবাস করার একপর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।