মোবাইল ফোনের জন্য বন্ধুকে খুন, হত্যাকারী কিশোর গ্রেপ্তার
স্কুলছাত্র নওফেল শেখ (১৪) বাবার কাছে বায়না ধরে একটি দামি মুঠোফোনের। ছেলের বায়না মেটাতে মাস দুয়েক আগে জমি বিক্রি করেন বাবা ঈসরাইল শেখ। ছেলেকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে ফোন কিনে দেন। কিন্তু ওই ফোনই কাল হয় নওফেলের জীবনে। মুঠোফোনে চোখ পড়ে তাঁর এক কিশোর বন্ধুর (১৬)।
ফোনটি হাতিয়ে নিতে নওফেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনামাফিক ধূমপানের কথা বলে নওফেলকে বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে ডেকে নেয়। এরপর অভিনয়ের ছলে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর নওফেলের ফোন নিয়ে চম্পট দেয় সে।মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্কুলছাত্র নওফেল শেখ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্ত্তী এসব কথা বলেন।
এ ঘটনায় নওফেলের বাবা ঈসরাইল শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কিশোরের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ফোন হাতিয়ে নিতে বন্ধু নওফেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে ওই কিশোর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জন্মদিনে ফুর্তি করার জন্য ধূমপানের কথা বলে নওফেলকে বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে ডেকে নেয়।
একপর্যায়ে নওফেলের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে মজার ছলে ওই কিশোর বলে, ‘যদি ফাঁস লাগিয়ে তোকে হত্যা করি মামা’। নওফেল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাকে বলে, ‘তুমি তো আমাকে হত্যা করবে না মামা’। এরপর অভিনয়ের ছলে নওফেলের গলায় লাগানো মাফলার ফাঁস দিয়ে পেছন থেকে গাছের সঙ্গে টেনে ধরে ওই কিশোর। এতে ছটফট করতে করতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে নওফেল। তখন লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে গ্রেপ্তার কিশোর। এরপর নওফেলের লাশ জঙ্গলে গুম করে মুঠোফোন নিয়ে চম্পট দেয়।
নওফেল বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দাড়িগাছা গ্রামের ঈসরাইল শেখের ছেলে ও দাড়িগাছা ইসলামি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ১৮ জুন তাকে হত্যা করে জঙ্গলে লাশ ফেলে রাখা হয়। ২০ জুন জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নওফেল হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি চৌকস দল গঠন করা হয়। প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শহরের একটি দোকান থেকে নওফেলের ব্যবহৃত ফোনটি উদ্ধার করা হয়। এরপর মুঠোফোনের সূত্র ধরে আটক করা হয় হোটেলে সময় কাটানো এক বান্ধবীকে। পরিচয় নিশ্চিতের পর মূল আসামিকে সোমবার টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার কিশোরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জঙ্গল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলারটি উদ্ধার করা হয়।
বন্ধুকে ঠান্ডা মাথায় হত্যার পর দুপুরে তার এক বান্ধবীকে শহরের সাতমাথায় ডেকে আনে ওই কিশোর। এরপর পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে এক দোকানে নওফেলের ফোনটি বিক্রি করে। মুঠোফোন বিক্রির টাকা পেয়ে বান্ধবীকে নিয়ে শহরের গালাপট্টি এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠে সে। বান্ধবীকে নিয়ে ফুর্তির পর মুঠোফোন বিক্রির অর্থ থেকে দেড় হাজার টাকা ওই মেয়ের হাতে দেয়। ২০ জুন নওফেলের লাশ উদ্ধার হলে ওই কিশোর গাজীপুরে আত্মগোপন করে।
হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে ওই কিশোর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিনিয়া জাহানের আদালতে ওই কিশোর স্বীকারোক্তি দেয়। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে মুঠোফোনের জন্যই নওফেলকে হত্যার কথা জানায় সে। শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।