মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে সড়ক পার হচ্ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এ সময় ওই পথ দিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালক তাঁকে সড়ক থেকে সরে যেতে হর্ন দিচ্ছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ওই গাড়িচালককে মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গাড়িচালক নজরুল ইসলাম মামলায় নিজেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ২৬ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতির নাতিকে টিউশনিতে দিয়ে ফেরার পথে ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ফোনে কথা বলতে বলতে এক তরুণ রাস্তা পার হচ্ছিলেন।
তিনি হর্ন দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন ওই তরুণ। তিনি গাড়ির সামনে এসে চালকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, গাড়ির পেছনে লাথি দেন। চালক ওই তরুণের পরিচয় জানতে গাড়ি পার্ক করে নামলে তিনি ফোন করে আরও কয়েকজনকে ডেকে এনে তাঁকে মারধর করেন। আত্মরক্ষার্থে চালক চিৎকার করলে তরুণেরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যান। পরে কর্মস্থলে ফিরে সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে থানায় মামলা করেন।
রাজধানীর ওয়ারীতে ২৬ জুন এ ঘটনা ঘটে। মারধর করা ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ওয়ারী থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী গাড়িচালক। এতে শিক্ষার্থী কৌসিক সরকারের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা চার–পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, কৌসিক সরকার সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। তিনি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম আবাসিক হলে।
ওই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সদস্য নয় বলে জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা।শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর কৌসিক সরকারকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে।ঘটনা সম্পর্কে জানতে শিক্ষার্থী কৌসিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
ঘটনার তদন্তকারী ওয়ারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশের উপপরিদর্শক জহির হোসেন বলেন, ‘ঘটনার তদন্তে আমরা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, কৌসিক নামের ওই শিক্ষার্থীকে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালককে আমাদের এক শিক্ষার্থী মারধর করেছেন। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’