আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশের এসআই মারধরের শিকার, ক্রসফায়ারের হুমকি

ব্যবসায়ীর সাবেক স্ত্রী’র সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান পুলিশের এসআই রবিউল ইসলাম। গত বছরের ১৭ই জানুয়ারি রাতে আপত্তিকর অবস্থায় এসআই রবিউল ও প্রেমিকা শাকিলাকে গ্রামবাসী হাতেনাতে ধরে ফেলেন। ওই সময় গ্রামবাসী পুলিশকে বেদম মারধর করে।

ঘটনার মাসখানেক আগেই স্ত্রী শাকিলার (২৬) সঙ্গে ব্যবসায়ী হানযালার বিচ্ছেদ হয়। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। পিটুনিতে ব্যবসায়ী আ. ফ. ম হানযালার হাত রয়েছে এমন ধারণা থেকে তার ওপর ক্ষিপ্ত হন এসআই রবিউল। মিথ্যা মাললা দিয়ে জেলেও পাঠানো হয়েছিল তাকে।

পরে জামিনে বেরিয়ে এসে সারিয়াকান্দি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল করিম, মাহবুব হাসান ও সারিয়াকান্দি চন্দনবাইশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ওই সময়ে কর্মরত এসআই রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন হানযালা। গত ২৩শে জুন বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলাটি করেন তিনি। 

ব্যবসায়ী হানযালা এজাহারে উল্লেখ করেছেন, স্থানীয়রা রবিউলকে তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেন। ওই সময় গ্রামবাসীর মারধরের শিকার হন রবিউল। এরপর থেকেই এসআই রবিউল তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা শুরু করেন।

পরবর্তীতে সারিয়াকান্দি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান তার কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। শুধু তা-ই নয়, চাঁদা না দিলে হানযালার ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুমকিও দেন ওসি মিজানুর রহমান। এমনকি হানযালা কোথাও যেনো বের হতে না পারে সেজন্য তার মোটরসাইকেল থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ২৫শে মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সারিয়াকান্দির গোল্ডেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বসে নাস্তা করছিলেন তিনি। এমন সময় ভিত্তিহীন অভিযোগে সারিয়াকান্দি থানার এসআই রবিউল করিম ও মাহবুব হাসান তাকে আটক করে।  

হানযালা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন মধ্যরাতে তাকে হাজত থেকে বের করে থানার এসআইদের রুমে নিয়ে গিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধর করার আগে গামছা দিয়ে তার চোখ বাঁধা হয়েছিল।

মারধর শেষে তার চোখের বাঁধন খুলে দেয়া হয়। ওই সময় ওসি মিজানুর বলেন, চাহিদার টাকা না দিলে এবং এসব বিষয়ে মুখ খুললে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

অভিযুক্ত এসআই রবিউল ইসলাম বর্তমানে রাজশাহীর বাঘা থানায় কর্মরত। যদিও মামলার আসামি সারিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান দাবি করেছেন হানযালা শিবিরের উপজেলা সভাপতি ছিলেন।।

তার আইনজীবী বিএনপির পদধারী নেতা। হানযালার পক্ষে যারা কথা বলবেন তারা সবাই বিএনপির লোক। তিনি একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা কেবল একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিলাম।

ওসি হানযালাকে মাদক ব্যবসায়ী বললেও মামলার অপর আসামি পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলছেন হানযালা মাদকসেবী। হানযালার সাবেক স্ত্রী শাকিলা উপজেলার দেবডাঙ্গা কাজলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মামলার বাদী হানযালা সারিয়াকান্দির দিঘলকান্দি উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সারিয়াকান্দি সদরের তরফদার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী তিনি।

মামলা করার পর থেকেই হানযালা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান তার আইনজীবী জাকিউল আলম সোহেল।  মানবজমিনকে সোহেল জানান, রবিউল স্থানীয়দের হামলার শিকার হওয়ার পর ধারণা করেন যে হানযালাই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। 

ফলে হানযালাকে বিভিন্ন ধরনের ভয় দেখিয়ে আসছিলেন চন্দনবাইশা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই রবিউল ইসলাম। পরবর্তীতে এ ঘটনায় এসআই রবিউল ইসলামকে বাঁচানোর জন্য অন্য পুলিশ কর্মকর্তারাও জড়িয়ে যান। 

২৬শে মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।  আইনজীবী জাকিউল আলম সোহেল জানান, হানযালা পুলিশের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ২৩শে জুন বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা করেন।

আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য বগুড়ার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দিয়েছেন।  মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, হানযালা একজন মাদকসেবী। তাকে আমরা গ্রেপ্তার করে আদালাতের মাধ্যমে জেলে পাঠিয়েছিলাম। জামিনে বেরিয়ে এসে সে আমাদের নামে মামলা করেছে।  

পুলিশ কর্তকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। কোর্ট থেকে কোনো কাগজপত্র আমাদের হাতে পৌঁছাইনি। 

অপর পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিম বলেন, হানযালাকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। থানায় নিয়ে নির্যাতন এবং টাকা দাবির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।  

এদিকে হানযালার দায়ের করা মামলার আসামি সারিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান  বলেন, তার সাবেক স্ত্রী শাকিলার সঙ্গে তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের অনৈতিক কার্যকলাপ চলাকালীন গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। 

Exit mobile version