ঢাকার সাভারে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার দুপুরে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মারধরের শিকার হন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত শিক্ষকের পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও কলেজে মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। শনিবার দুপুরে খেলা চলাকালে দশম শ্রেণির ওই ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত শিক্ষক উৎপল সরকারের ওপর হামলা চালায়।
প্রথমে ওই ছাত্র শিক্ষকের মাথায় আঘাত করে এবং পরে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এ ছাড়া স্টাম্পের সুচালো অংশ দিয়ে পেটের বিভিন্ন অংশে আঘাত করেন। পরে শিক্ষকেরা এগিয়ে গেলে ওই ছাত্র সেখান থেকে সটকে পড়ে।
নিহত উৎপল কুমার সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতিও ছিলেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এলংজানি গ্রামে।মারধরের অভিযোগ ওঠা শিক্ষার্থীর (১৬) বাড়ি আশুলিয়ায়। সে হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।
হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, অনেকে তাঁকে জানিয়েছেন, দুপুরে মাঠে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলাকালে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষক উৎপল সরকার। এ সময় দশম শ্রেণির ওই ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে তাঁকে মারধর করে।
উৎপল সরকার শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হওয়ায় তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেন। কেন ওই ছাত্র এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটি এখনো কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না।
গুরুতর আহত অবস্থায় উৎপল সরকারকে প্রথমে আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ সোমবার ভোরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত উৎপলের ভাই অসীম কুমার সরকার বলেন, ‘ঘটনার দিন বাসা থেকে স্কুলের পাশেই আমার দোকানে আসার সময় জানতে পারি ভাইকে স্টাম্প দিয়ে পিটাইছে। হাসপাতালে গিয়ে শুনি পেটে, বুকে, পিঠে ও মাথায় স্টাম্প দিয়ে মারধর করছে। হাসপাতালে আজ ভাই মারা গেছেন।’
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমদাদুল হক বলেন, শিক্ষক উৎপল সরকার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা রক্ষায় শাসন করতেন। হয় তো আগের এমন কোনো বিষয় নিয়ে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
এসআই এমদাদুল হক বলেন, গতকাল রোববার ওই ছাত্রসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে নিহত উৎপলের ভাই অসীম কুমার সরকার মামলা করেছেন। আসামিকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। লাশ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।