আজ সোমবার রমেনের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে জেনে প্রতিবেশী মো. মিজান রমেনের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পেরে রমেন ইঁদুর মারা বিষ (গ্যাস ট্যাবলেট) খান। গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে বাড়ির সামনে রাস্তার ওপরে গড়াগড়ি করতে করতে থাকেন।
এসময় তিনি বলতে থাকেন—‘মিজান পটুয়াখালী লোহালিয়া এলাকার একটি মেয়েকে দিয়ে আমাকে ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন সময় টাকা নিয়েছে। ১৯ জুন আমার কাছে মিজান ২ লাখ টাকা চায়, আমি দিতে পারিনি। তাই মিজান বলে, ওই মেয়ের ভিডিও ছেড়ে দেবে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাই আমি গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মিজানের হাত থেকে বাঁচতে চাই।’
পটুয়াখালীর দশমিনায় ইঁদুর মারা বিষ খেয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল রোববার বিকেল ৪টায় উপজেলার কাটাখালী ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। রমেন ঘরামি (৩০) নামে ওই যুবক উপজেলার কাটাখালী গ্রামের রণজিৎ ঘরামির মেজো ছেলে।
লোকজন দেখতে পেয়ে রমেনকে দশমিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবিদা নাসরিন জিতু উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যান রমেন।
এলাকার বাসিন্দা রিফাত বলেন, ‘রাস্তার ওপর গড়াগড়ি করতে দেখে রমেনকে দশমিনা হাসপাতালে নিয়ে আসি। রমেন পটুয়াখালী মিজানের কাছে যাইত। মিজান মেয়েদের ফিটিং দিয়ে রমেনের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নিত। মিজান এলাকার লোকদের পটুয়াখালী পাইলে গাঁজা বা মেয়ে দিয়ে ফিটিং দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত।’
রমেনের প্রতিবেশী শুভময় রায় বলেন, ‘রমেন সহজসরল ছেলে। দশমিনা বাজারে পানের ব্যবসা করত। তার বাড়ির পাশের নুরু খানের ছেলে মিজান পটুয়াখালী সদরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করে। সেখানে তাদের বন্ধুত্ব হয়। রমেন বিভিন্ন সময় পটুয়াখালীতে মিজানের কাছে গিয়ে থাকত।
মিজান কোনো এক মেয়েকে দিয়ে রমেনের সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে এবং বিভিন্ন সময় রমেনের কাছ থেকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নিত। মিজান এলাকায় চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। এলাকায় মিজানের জন্য অনেক যুবক আজ নেশাগ্রস্ত।’
ছেলের মৃত্যুর ব্যাপারে রমেনের বাবা রণজিৎ বলেন, ‘আমার ছেলেকে নিয়ে পটুয়াখালী মর্গে আছি। আমার ছেলেকে আমার প্রতিবেশী নুরু খাঁর ছেলে মিজান মেরেছে। মিজান দীর্ঘ এক বছর ধরে ছেলেকে ফোন করে পটুয়াখালী ডেকে নিত। আমি জানতে চাইলে ছেলে কিছুই বলত না। আজ বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল।
ভিডিও দেখে বুঝলাম মিজান মেয়ে ফিট করে আমার ছেলের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নিত। টাকা দিতে না পারায় আমার ছেলে আত্মহত্যা করছে। আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য মিজান দায়ী। আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।’ পটুয়াখালী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।’