ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োগসংক্রান্ত প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’-এর বিরোধিতা করে ভারতজুড়ে বন্ধ্ পালন করছেন চাকরিপ্রত্যাশী বিক্ষোভকারীরা। চুক্তিভিত্তিক ও স্বল্পমেয়াদি এ প্রকল্প বহাল থাকবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর আজ সোমবার দেশজুড়ে বন্ধ্ পালনের ঘোষণা দেন তাঁরা। বন্ধ্কে কেন্দ্র বিভিন্ন রাজ্যে মোট ৪৮৩টি ট্রেন সেবা বাতিল করা হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
দিল্লির কাছে গৌতম বুদ্ধ নগর এলাকায় বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ব্যাহত না করার জন্য জনগণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।দিল্লির কাছে ফরিদাবাদে পুলিশের মুখপাত্র সুবে সিং বলেন, তাঁরা যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য আজ মাঠে থাকবেন।
অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতা করে গত কয়েক দিনে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। বন্ধ্কে কেন্দ্র করে আজ এসব রাজ্যে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।আজ বন্ধ্কে কেন্দ্র করে বিহার রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে সাড়ে ৩০০ ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ জেলায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে।
কংগ্রেস বলেছে, আজ দেশজুড়ে তাদের দলের লাখো কর্মী অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করবে। রাহুল গান্ধীকে লক্ষ্য করে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘প্রতিহিংসার রাজনীতির’ বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানাবে তারা।
পাঞ্জাবের রাজ্য সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কার্যালয়, সেনা নিয়োগ কেন্দ্র এবং বিজেপি ও হিন্দু নেতাদের কার্যালয়গুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।কেরালা পুলিশ বলেছে তাদের গোটা বাহিনী আজ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
কেউ সহিংসতায় লিপ্ত হলে কিংবা জনগণের সম্পদ ধ্বংস করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে পিটিআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্ধ্কে কেন্দ্র করে আজ ঝাড়খণ্ডে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। নবম ও একাদশ শ্রেণির চলমান পরীক্ষাগুলোও স্থগিত করা হয়েছে।
গত বুধবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, অগ্নিপথ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সের নারী-পুরুষেরা চার বছরের জন্য সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীতে চাকরি পাবেন। তাঁদের মূলত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এ সময় তাঁদের প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার রুপি বেতন এবং চার বছর পর ১১ থেকে ১২ লাখ রুপি এককালীন অর্থ দেওয়া হবে। কিন্তু ২৫ শতাংশের বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণের চাকরি স্থায়ী হবে না। চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে তিন বাহিনীতে এ নিয়োগ হবে। এ নিয়োগ নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, সশস্ত্র বাহিনীতে তারুণ্যের পাশাপাশি অভিজ্ঞতার দরকার আছে। সশস্ত্র বাহিনীর সংস্কারের জন্য অগ্নিপথের মতো প্রকল্পের দরকার আছে। এটা অনেক দিন থেকেই ভাবা হচ্ছিল।এ কারণে অগ্নিপথ প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়া হবে না।কর্মকর্তারা আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্নিবীরদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা (সংরক্ষণ) হবে। এই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণার পর এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ঝাড়খন্ড, দিল্লিসহ ১০টি রাজ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বয়সসীমা কম হওয়ায় ও চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় চাকরিপ্রার্থী শত শত তরুণ রাস্তায় নেমে আসেন।
বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আহত হন বেশ কয়েকজন। একপর্যায়ে অগ্নিপথ প্রকল্পের আওতায় চাকরিতে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৩ বছর করার ঘোষণা দেয় সরকার। তবে ২৫ শতাংশের বেশি তরুণের চাকরি স্থায়ী না করার সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।