কুমিল্লায় মেয়র পদে আরফানুলকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হককে (রিফাত) বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হকের (সাক্কু) চেয়ে ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি।এই ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন মনিরুল হক। তিনি বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে শেষ মুহূর্তে কয়েকটি কেন্দ্রের ফল আটকে রেখে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হয়।কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে দুজন।
আজ বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, নৌকা মার্কার প্রার্থী আরফানুল হক পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক (সাক্কু) পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।
সকাল আটটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছিলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের গত দুই মেয়াদের মেয়র মনিরুল হক। তিনি বলেছিলেন, ভোটের ফল মেনে নেবেন।পুরোপুরি ইভিএমে হওয়া এই নির্বাচনের ভোটের ফল সন্ধ্যার পর থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে ঘোষণা করা হয়।
ফলাফলে মেয়র পদে আরফানুল হকের ও মনিরুলের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে থাকে। ফল ঘোষণার শেষ পর্যায়ে মনিরুলের একদল নেতাকর্মী শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। তাঁরা মনিরুল হকের নামে স্লোগান দিতে থাকেন।
এই ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন মনিরুল হক। তিনি বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে শেষ মুহূর্তে কয়েকটি কেন্দ্রের ফল আটকে রেখে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষণা দেন যে, আর চার থেকে পাঁচটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা বাকি আছে। সেগুলো আসতে দেরি হবে। সে কারণে তাঁরা কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের ফল ঘোষণা করবেন।
সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ করেন মনিরুল হকের সমর্থকেরা। এক পর্যায়ে একদল নেতাকর্মীকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে আসেন মনিরুল হক। এ সময় পুলিশ মনিরুলের সমর্থকদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।এক পর্যায়ে কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে ফল ঘোষণা মঞ্চের সামনে এসে বসেন মনিরুল হক। ফল ঘোষণা না হলে যাবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি।
ফল ঘোষণা স্থগিত হওয়ার আগে ১০১ টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের চেয়ে হাজারখানেক ভোটে এগিয়ে ছিলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তখনকার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, টেবিল ঘড়ির প্রতীকে সাক্কু ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট এবং নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট পেয়েছিলেন।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত মাইকে ঘোষণা দিয়ে তার সমর্থকদের নিজ নিজ অবস্থানে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলে ফলাফল ঘোষণা স্থানে ভিড় জমে যায়। এ সময় উৎসুক জনতা ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা ভিড় করলে তাদের সেখান থেকে সড়িয়ে দেয় পুলিশ এবং পুনরায় ভোটের ফলাফল ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হকের একদল সমর্থক মিছিল নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে আসেন। তাঁরা ভোটের ফল ঘোষণা কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন।তখন পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এরপর কিছুক্ষণ ফল ঘোষণা বন্ধ থাকে।পরে আরফানুল হককে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এ নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করছে ৩ হাজার ৬০০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ১০৫টি মোবাইল টিম, ৪০টি র্যাবের টিমসহ বিভিন্ন সংস্থা।