দশদিন পরেই উদ্বোধন করা হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ২৫শে জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতু দিয়ে শাঁ শাঁ করে চলবে সব ধরনের যানবাহন। সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে।উদ্বোধনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পুরো দেশের মানুষের মাঝেও এ নিয়ে আনন্দের বন্যা বইছে। কিন্তু বহুল আলোচিত স্বপ্নের এই সেতু ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দল। এজন্য নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। দেশজুড়ে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। পদ্মা সেতুর আশপাশের এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
নিরাপত্তায় নেয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস ও মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) মো. হায়দার আলী খান বলেন, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করানো হবে। তাদের মধ্যে হকার, খাবার বিক্রেতা সেজে যেন কোনো প্রকার নাশকতা ঘটাতে না পারে সেক্ষেত্রে বিশেষ তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে।
পাশাপাশি অনুষ্ঠানকে ঘিরে কেউ যেন উস্কানি ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে না পারে তাদেরকে সাইবার পেট্রোলিং ও মনিটরিং এর আওতায় আনা হবে। সাইবার নজরদারি চলছে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে বিশেষভাবে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বড় পর্দায় একযোগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হবে। সারা দেশের কোথাও যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সে বিষয়ে কাজ করবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় থানা ও ট্রাফিক পুলিশ। অনুষ্ঠানকে ঘিরে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করলেও সেটা সফল হবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশের পাশপাশি এসএসএফ, আর্মড পুলিশ, সোয়াত, ডগ স্কোয়ার্ড, বোম ডিস্পোজাল ইউনিট, সাইবার পেট্রোলিং, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই, সকল থানা পুলিশ একযোগে কাজ করছে।
কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে একটি মহল নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কিছু ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তারা অনুষ্ঠানকে বানচাল করতে পারে।
এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশের প্রতিটি থানায় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়াতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক সাইবার মনিটরিং করা হচ্ছে। উদ্বোধনের দিন পদ্মার দুই পাড়েই পাঁচ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইউনিফরমে মোতায়েন থাকবেন।
সাদা পোশাকে তৎপর থাকবেন বিপুলসংখ্যক গোয়েন্দা সদস্য। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকেও আলাদা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডিএমপি’র থানা এলাকায় থাকা মেস ও আবাসিক হোটেলগুলোতে অপরিচিত ও সন্দেহজনক কেউ অবস্থান করছে কিনা সেটি জানার জন্য নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযান চালানোরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি’র সূত্র বলছে, ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতনদের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। মেস ও আবাসিক হোটেলগুলোতে ঢাকার বাইরে থেকে বহিরাগত কেউ অবস্থান নিয়েছে কিনা, অবস্থান নিলেও তার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আর কারও ওপর সন্দেহ হলে তার ওপর বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। গত রোববার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড, সিলেটে ট্রেনে আগুনসহ কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এসব ঘটনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কোনো ষড়যন্ত্র কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এগুলো অন্তর্ঘাত হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। গোয়েন্দাদের কাছে কিছু খবর আছে।পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা আমাদের আগেও ছিল, এখনো আছে।
সূত্রগুলো বলছে, পদ্মার দুই পাড়ে সংশ্লিষ্ট দুই জেলার বাইরে থেকেও ফোর্স নিয়ে আসা হবে উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে। নদীতে নৌ-পুলিশ নিরাপত্তা দেবে। সঙ্গে কোস্টগার্ডও থাকবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
পদ্মার দুই পাড়ে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজনদের এরই মধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাব সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। যাতে করে কেউ অনলাইনে কোনো ধরনের উস্কানিমূলক তথ্য না প্রচার করতে পারে।