ডিবিসি নিউজের প্রডিউসার আব্দুল বারী হত্যার ৪ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বরং হত্যার তদন্তে নিয়েছে নতুন মোড়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বন্ধ মুঠোফোন, মানিব্যাগে পৃথকস্থানে থাকা ৭শ’ টাকা এবং তার এক রুমমেটকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন রহস্য।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে গুলশান থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, গোয়েন্দা, সিআইডি, পিবিআইসহ কাজ করছে একাধিক সংস্থা। এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনের লক খোলা এবং তার সঙ্গে থাকা দুই রুমমেটসহ অন্যদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব।
গত ৮ই জুন বুধবার ভোরে হাতিরঝিল এলাকায় পুলিশ প্লাজার উল্টোদিকের লেক পাড় থেকে বারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সূত্র জানায়, শাকিল হোসেন এবং রাব্বি রহমান নামে দুই রুমমেটসহ মহাখালীর ভাড়া মেস বাসায় থাকতেন বারী।
অফিস এবং বাসার বাইরে সারাক্ষণ মুঠোফোনে সিনেমা, নাটক এবং গান শুনতেন। মৃদুভাষী বারীকে কারা এবং কেনইবা এমন নৃশংসভাবে হত্যা করে সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শাকিল এবং রাব্বি। এদিকে হত্যার ধরণ দেখে গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা তাকে যেখানে হত্যা করা হয়েছে সেখানে সাধারণত রাতের বেলায় কেউ বেড়াতে বা হাঁটতে যান না। স্থানটি খুব নির্জন।
বাইপাস রাস্তা হিসেবে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষজন এবং মাদকসেবীদের আনাগোনা থাকলেও নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি নেই কোনো পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা। ধারণা করা হচ্ছে তাকে প্রথমে সেখানে ডেকে নেয়া হয়। পরে কিছুক্ষণ কর্তাবার্তার একপর্যায়ে তাকে ফল কাটার সাধারণ ছুরি দিয়ে গলায় এবং পরে নাভির উপরে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়।
এটা কী নিছকই ছিনতাইয়ের ঘটনা, প্রেমঘটিত, আর্থিক লেনদেন বা পূর্ব শত্রুতার জেরে হত্যাকাণ্ড এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা। বারীর ভাই আব্দুল আলিম বলেন, হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ খুনিদের শনাক্ত বা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এটা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক।
রুমমেট শাকিল এবং রাব্বি পড়ালেখার পাশাপাশি ফুড ডেলিভারি কোম্পানিতে খণ্ডকালীন কাজ করেন। এই ঘটনার পরপরই বারীর পাশের রুমে থাকা এক রুমমেট বাসায় ফেরেননি। তিনি ওইদিন রাতে ঢাকার বাইরের একটি জেলায় যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান। ওইদিন সকালে বারীর মহদেহ উদ্ধারের পরপরই তার এক রুমমেটকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে গুলশান থানা পুলিশ।
এ সময় অন্য রুমমেটের সন্ধান করা হলে জানা যায়, তিনি ঘটনার দিন রাতে ঢাকার বাইরে একটি বিভাগীয় শহরে ব্যক্তিগত কাজে যান। নিহতের রুমমেটদের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বভাবসুলভ বারী ছিলেন অত্যন্ত মৃদুভাষী। প্রয়োজন ছাড়া অফিস এবং মেসের রুমমেটদের সঙ্গে বাড়তি কোনো কথা বলতেন না।
বেশ কিছুদিন ধরে বিষন্নতা এবং মানসিকভাবে অস্বাভাবিকতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছিলেন বলে দাবি তার রুমমেটদের। রুমমেট শাকিল হোসেন এবং রাব্বির সঙ্গে গত পাঁচমাস ধরে ভাড়া বাসায় থাকলেও তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথার বাইরে কখনোই কথা হয়নি বারীর।
ঘটনাস্থল থেকে যে মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটি বন্ধ বলা হচ্ছে। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশের পক্ষে খুব সহজেই ফোনটি খুলে তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব। এছাড়া ঘটনার পরপরই বারীর পাশের কক্ষের এক রুমমেটের ওইদিন রাতে এবং সারাদিনে বাসায় না ফেরাটিও সন্দেহজনক বলে দাবি করেন তিনি। এ
বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি প্রধান) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছেন, প্রযোজক আবদুল বারী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে সময় লাগবে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ফোনটি বন্ধ থাকায় কিছুটা সময় লাগছে।
হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য বের করার চেষ্টা করছি আমরা। আশা করছি শিগগিরই হত্যাকারীদের আমরা শনাক্ত করতে পারবো। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হলেও সেটি লক করা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।
বারীর সঙ্গে থাকা দুই রুমমেটকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তথ্য দেয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের এক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেন, ঘটনাটি আমরা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তদন্ত করছি। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।