নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার পাগলায় স্কুলছাত্রীকে এক শিক্ষকের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অডিও ফাঁস হয়েছে। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।আজ বৃহস্পতিবার সকালে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মাসুদ রানা। তিনি এ স্কুলের গণিত শিক্ষক। গতকাল বুধবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিওটি ভাইরাল হয়। আজ স্কুল শুরু হতেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে শিক্ষকের বরখাস্তের দাবি জানায়।বুধবার (৮ জুন) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অডিওটি ফাঁস হওয়ার পর থেকে কুতুবপুরজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে৷
ফাঁস হওয়া প্রায় ৬ মিনিটের কিছু বেশি দীর্ঘ অডিওতে শোনা যায় মাসুদ রানা তাঁর স্কুলের এক ছাত্রীকে নানা ভাবে কুপ্রস্তাব দিচ্ছেন। মেয়েটি বিভিন্ন ভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ওই সময় ভিডিও কলে আপত্তিকর বিষয়ে সাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দিতেও শোনা যায়। এই অডিও ফাঁস হওয়ার পর আজ সকালে স্কুলে এসেই ছাত্র-ছাত্রীরা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বরখাস্ত ও উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে।
বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজেন্দ্রনাথ বলেন, ‘স্কুলছাত্রীকে আপত্তিকর প্রস্তাব এবং অডিও ফাঁসের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছে ওই শিক্ষক। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। তাকে স্থায়ী ভাবে বরখাস্ত করা হতে পারে।’
ফাঁস হওয়া প্রায় ৬ মিনিটের কিছু বেশি দীর্ঘ অডিওতে শোনা যায় মাসুদ রানা তাঁর স্কুলের এক ছাত্রীকে নানা ভাবে কুপ্রস্তাব দিচ্ছেন। মেয়েটি বিভিন্ন ভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ওই সময় ভিডিও কলে আপত্তিকর বিষয়ে সাড়া দেওয়ার প্রস্তাব দিতেও শোনা যায়।
জানা যায়, মাসুদ রানার বিরুদ্ধে এর আগেও যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগ এনেছেন শিক্ষার্থীরা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী জানান, ক্লাসে, কোচিংয়ে ও মোবাইলে অনেককেই কুরুচিপুর্ণ প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷এ ব্যাপারে স্কুলের এডহক কমিটির সদস্য রেজাউল করিমকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি৷ বরং রেজাউল করিমের সাথে সুসম্পর্কের দোহাই দিয়ে মাসুদ রানা দীর্ঘ বছর তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গতকালের ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ তারই উদাহরণ৷
আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলে, ‘মাসুদ রানার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে। সেগুলো আমরা সবাই জানি, কিন্তু স্কুলের অনেকে মানসম্মান যাওয়ার ভয়ে প্রকাশ করে না। তিনি ছাত্রীদের ক্লাসে, কোচিংয়ে এবং মোবাইলে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন।
তাঁর প্রস্তাবে সাড়া না দিলে নম্বর কমিয়ে দেওয়ার হুমকিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান। এসব নিয়ে স্কুলে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছিল।’ প্রকাশিত অডিওর সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদ রানা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ভুল করে ফেলেছি, এই বিষয় নিয়ে খুব চাপে আছি।’
হয়রানির স্বীকার ওই ছাত্রী জানান, মাসুদ রানা প্রায়ই তাকে ক্লাসে ও মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করতেন৷ তাকে কল দিয়ে আপত্তিজনকভাবে ভিডিও কলে আসতে বলতেন। শেষমেশ তিনি মাসুদ রানার কথাগুলো রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেন৷ক্লিপটি প্রকাশ্যে আসার পরে তা ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লাগে রেজাউল করিমসহ অন্যান্যেরা৷
কিন্তু বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ছাত্রছাত্রীরা একজোট হয়ে মাসুদ রানার যথাযথ শাস্তিসহ স্কুলের শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনা, অনিয়ম- দুর্নীতি বন্ধের দাবি তুললে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়৷ ফলে তড়িঘড়ি করে মাসুদকে সাময়িক বহিস্কার করে ছাত্রছাত্রীদের ঘরে ফিরে যেতে বলা হয়।
ফাঁস হওয়া ছয় মিনিটেরও বেশি দৈর্ঘ্যের অডিওতে মাসুদ রানাকে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দিতে শোনা যায়৷ সেখানে বহিস্কৃত শিক্ষক মাসুদ রানা কে বলতে শোনা যায়, ভিডিও কল দিলে একটু খুলে দেখিও। এ নিয়ে ছাত্রীটি নানা কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেও সে বারবার একই কথা বলে আসছিলো।