চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কেশবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবহৃত কনটেইনারের ব্যবস্থাপনা ও খালি কনটেইনারের সংরক্ষণ করা হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চালু হয়েছিল এটা। ডিপোর মালিকদের একজন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার নেতা।
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে হতাহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা ডিপোর মালিকপক্ষেরযৌথ বিনিয়োগের এই ডিপোতে বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপের অংশীদারি রয়েছে। যে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের রাসায়নিক পদার্থ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সেটিও স্মার্ট গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের। পোশাক, এলপিজি ও খাদ্যপণ্য খাতে বিনিয়োগ রয়েছে স্মার্ট গ্রুপের।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এই ডিপোতে আগুন লাগে। সেই আগুন ছড়িয়ে রাসায়নিক থাকা কনটেইনার বিস্ফোরণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। এতে অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও আগুন এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নেভানো ও উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছেন। অভিযানে যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।
এই কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএম কনটেইনার ডিপোর চেয়ারম্যান বার্ট প্রঙ্ক। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরিচালক হলেন স্মার্ট জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান। মুজিবুর সম্পর্কে মোস্তাফিজুরের ভাই।
মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে আছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁতে সাড়া দেয়নি দল।মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাটি নিঃসন্দেহে সারা দেশের জন্য বেদনাদায়ক। এই দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, সবাই আমার পরিবারেরই সদস্য।
যাঁরা আহত হয়েছেন, সবাই আমার আপনজন, স্মার্ট গ্রুপের সহকর্মী। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যেকোনো প্রয়োজনে মানবিকতার সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করতে আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের পাশে আর্থিক, মানসিক সহযোগিতা দিয়ে থাকব শেষ পর্যন্ত। আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার জন্য নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিএম কনটেইনার ডিপোর ৩৫ লাখ শেয়ারের মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার শেয়ার রয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের নামে। তাঁর ভাই পরিচালক মুজিবুর রহমানের নিজের নামে আছে ১৫ হাজার শেয়ার। আর স্মার্ট জিনসের নামে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার শেয়ার। নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে এই ১৮ লাখ ৩৬ হাজার শেয়ার স্মার্ট জিনসের কাছে হস্তান্তর করে। নেদারল্যান্ডসের মেসার্স প্রঙ্ক পার্টিসিপেটের নামে আছে ১৫ লাখ ১১ হাজার শেয়ার।
দেশের বিভিন্ন কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে রপ্তানি পণ্য এনে এই ডিপোর কনটেইনারে বোঝাই করা হয়। শুল্কায়ন কার্যক্রম শেষে কনটেইনার বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ৩৭ ধরনের পণ্য ডিপোতে এনে কনটেইনার খুলে খালাস করা হয়ে থাকে। মূলত বন্দরের ওপর চাপ কমাতে ২৪ বছর আগে এই শিল্পের যাত্রা শুরু হয়।
বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে এই ডিপোতে গতকাল রাতে কত কনটেইনার ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, এখানে গড়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী দেড় হাজার এককের বেশি কনটেইনার থাকে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশই পরিবহন করা হয় এই ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে। আর বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের মধ্যে গড়ে ২৩ শতাংশ খালাস হয় এসব ডিপো থেকে। আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ছাড়াও খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করে বেসরকারি ডিপোগুলো।
বর্তমানে চট্টগ্রামে ১৬টি শিল্পগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো রয়েছে। সব কটি ডিপো গত বছর মোট ১০ লাখ একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। এর মধ্যে ৭ লাখ রপ্তানি পণ্যের ও ৩ লাখ আমদানি পণ্যের কনটেইনার ছিল।