রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যার আসামি সুমন শিকদার ওরফে মুসা ওমানে ইন্টারপোলের হাতে আছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য বিনিময়ে ওমান পুলিশ মুসাকে শনাক্ত করেছে। তাঁর গতিবিধি ওমান পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে বলে এর আগে জানা গিয়েছিল।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত মাসের শুরুর দিকে মুসা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই থেকে ওমানে যান।তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাংলাদেশে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আলোচিত জোড়া খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ‘পেশাদার খুনি’ মুসার নাম এসেছে।
তবে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, মুসার অবস্থান নিশ্চিত করেছে ওমান পুলিশ। তাঁকে আইনের আওতায় আনতে ওমান থেকে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। সে তথ্য বিনিময় চলছে। বাংলাদেশের সরবরাহ করা তথ্য-উপাত্ত সন্তোষজনক হলে তাঁকে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে এর জন্য আরো সময় লাগবে।
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরে ইন্টারপোলের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিদুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘মুসার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ওমানে যোগাযোগ হচ্ছে। এই মুহূর্তে আর কিছু বলতে চাইছি না। তবে শিগগিরই বিষয়টি জানাতে পারব। ’
এদিকে জাহিদুলকে গুলি ছোড়া ব্যক্তিকে মোটরসাইকেলে বহনকারী আসামিকেও শনাক্ত করেছে পুলিশ ও র্যাব। মোল্লা শামীম নামের ওই ব্যক্তি ঘটনার পরদিন উত্তরবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। পরে ভারত থেকে তিনি ভুটানে চলে গেছেন। তবে তাঁর পাসপোর্ট আছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাব।
মোল্লা শামীম থাকতেন খিলগাঁও এলাকায়। তাঁর ভুটানে অবস্থানের তথ্য পেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের পেছনে থাকা সহায়তাকারী দলের আরো তিনজনের ব্যাপারে তথ্য যাচাই করছে পুলিশ ও র্যাব।
চাঁদাবাজি ও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন জাহিদুল ইসলাম টিপু। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশার যাত্রী কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
জাহিদুল ইসলাম খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে প্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ মুসাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেলও জব্দ করতে পারেননি তদন্তকারীরা।
ডিবি ও র্যাবের দুটি সূত্র জানায়, হত্যার সময় মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ গুলি চালিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার আকাশকে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলে নিয়ে যান মোল্লা শামীম। তাঁরা দুজন বন্ধু। শামীম শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের অনুসারী বলেও জানা গেছে। মুসা ও শামীমকে গ্রেপ্তার করা গেলে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।
মুসার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘মুসাকে গ্রেপ্তার করে দেশে আনার ব্যাপারে বেশ কিছু অগ্রগতি আছে। পরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। ’ আর শামীমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শ্যুটারকে বহনকারী মোটরসাইকেলচালককে শনাক্ত করা গেছে। ’
নিহত টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি গতকাল বলেন, ‘সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে ধৈর্য ধরতে বলেছে। আশা করছি, দু-চার দিনের মধ্যে ভালো খবর পাব। ’গোয়েন্দা সূত্র মতে, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মুসা ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে দুবাই চলে যান। সেখান থেকে গেছেন ওমানে। আর মোল্লা শামীম হত্যাকাণ্ডের পরের দিন ভারতে পালিয়ে যান।