Bangla News

৫০-৬০টি ‘বিলাসপণ্যে’ আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক বাড়তে পারে

৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হচ্ছে। সেই বাজেটে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বাড়তি আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসছে। ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় এ তালিকায় প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা।

বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) সাশ্রয়ের জন্য আরও অর্ধশতাধিক পণ্যের ওপর নানা ধরনের শুল্ক বসছে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে আসন্ন বাজেটে মূলত ওই সব বিলাসপণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আমদানি পর্যায়ে বাড়তি শুল্ক বসানোর তালিকায় আছে উচ্চ সিসির ব্যক্তিগত গাড়ি, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, এসি, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, টেবিলওয়্যার, শোপিস, ঝাড়বাতি, সাধারণ বাতি, সাবান, শ্যাম্পু, বিস্কুট, চকলেট, পাদুকা, টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার, টেবিলওয়্যার, মদজাতীয় পণ্য ইত্যাদি।

গত ২৩ মে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৩৫টি পণ্যের আমদানি পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করে। ওই তালিকায় মূলত আসবাবপত্র, প্রসাধনসামগ্রী, ফুল ও ফলজাতীয় পণ্য আছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শুল্ক বাড়ানোর এই উদ্যোগ তেমন কাজে আসবে না। যাঁরা এ ধরনের বিদেশি বিলাসপণ্য ব্যবহার করেন, তাঁরা দাম নিয়ে চিন্তা করেন না। তাঁরা কিনবেনই, তাই আমদানিও কমানো যাবে না। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয় বলেই নেওয়া হয়। এটা অনেকটা মলম লাগানোর মতো।’

আগামী বাজেটে নতুন করে যে অর্ধশতাধিক পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বসানো হচ্ছে, তার কোনোটির ওপর আমদানি শুল্ক বাড়বে, আবার কোনোটির ওপর বাড়তি সম্পূরক শুল্ক বসবে। আবার কিছু পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসবে।

কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। আবার এক-দেড় মাস ধরে ডলারের দাম বাড়ছে। ব্যাংকে ডলারের দাম দুই টাকার মতো বেড়েছে। তবে খোলাবাজারে ডলারপ্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। এসব কারণে আমদানি খরচ হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ধরে রাখতে সরকার ঋণপত্র বা এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেয়। সরকারি কর্মকর্তাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ মে আমদানি পর্যায়ে আসবাবপত্র, প্রসাধনসামগ্রী, ফুল ও ফল—এই চার ধরনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হয়।

ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু পণ্য সাময়িক আমদানি নিষিদ্ধ করার চিন্তাভাবনা করেছিল। কিন্তু বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য উদারীকরণের শর্ত হিসেবে আপাতত তা–ও সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখন বাড়তি শুল্ক বসানোর পথেই হাঁটছে সরকার।

আসবাব, প্রসাধন, ফুল-ফলে গত ২৩ মে বসানো ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখা হতে পারে বলে এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এক মাস সাত দিনের জন্য ওই সব পণ্যের আমদানির ওপর বাড়তি শুল্ক বসানো হয়। অর্থাৎ ৩০ জুন এর মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু এটি আপাতত অব্যাহত রাখার পক্ষে এনবিআর।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ফুল-ফল, আসবাবপত্র, প্রসাধনের আমদানিপ্রবাহ যদি ঠিক থাকে, তাহলে বাড়তি ৮৮ কোটি টাকার বাড়তি শুল্ক পাওয়া যাবে।বাংলাদেশ তাজা ফল আমদানিকারক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিবছর চার থেকে সাড়ে চার লাখ টন আপেল, নাশপাতি, আঙুর, খেজুর, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল আমদানি হয়। সারা দেশের মানুষের ফলের চাহিদার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই মেটাতে হয় বিদেশি ফলে। প্রতিবছর গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নতুন করে বাড়তি শুল্ক বসানোর ফলে আমরা আবার শুল্ক সুরক্ষা বাড়িয়ে দিচ্ছি। এ ধরনের উদ্যোগ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) থেকে উত্তরণপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখন আমরা উল্টো পথে চলা শুরু করেছি।

এলডিসি থেকে বের হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য টেকসই করতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হলে শুল্ক সুরক্ষা কমাতে হবে।’ মুদ্রানীতির মাধ্যমেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ধরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

Back to top button