পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমায় মঙ্গলবার অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযোগ, অনলাইনে চলছে বোমা বিক্রি। বিক্রির পর পাওয়া যাচ্ছে হোম ডেলিভারি। ক্রেতাদের বোমার ছবি দেখিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্ডার। অনলাইনে পেমেন্ট কনফার্ম হওয়ার পর ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে বোমার হোম ডেলিভারি। সুতলি বোমার দাম রাখা হয়েছে মাত্র ২৫০ রুপি এবং কৌটো বোমার দাম মাত্র ৪৫০ রুপি।
পুলিশ সূত্রের খবর, তাদের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও এতদিন প্রমাণের অভাবে কিছুই করতে পারছিলেন না। কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করে এদিন বোমা কারবারিকে গ্রেপ্তারের পর তার ফোন ঘেঁটে পাওয়া যায় একাধিক ক্রেতার তথ্য। পুলিশ বলছে, এমন ব্যবস্থায় ঝুঁকি না থাকায় এবং বাড়িতে বসে বোমার ডেলিভারি মেলায় প্রতিদিন প্রচুর অর্ডার পেতেন তিনি। স্থানীয় দুষ্কৃতকারী থেকে দূর-দূরান্তের অপরাধ জগতের গড ফাদার হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কাটোয়া মহকুমার মুলটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমন অনলাইন বোমা ডেলিভারির কারবারিদের গ্রেপ্তার করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ।মঙ্গলবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে অনলাইন বোমা ডেলিভারি কাণ্ডে মকবুল শেখ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় তার বাড়িতে পাওয়া গেছে কয়েকশ বোমা। সেগুলো উদ্ধার করে নষ্ট করেছে বোম্ব স্কোয়াড।
মকবুল কোন কোন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বোমা বিক্রি করতেন তার সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।এমন ঘটনা সামনে আসার পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত বলছেন, এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আমি আর তাজ্জব হই না।
প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে এখন বোমা, গুলি, বন্দুক, মেশিনগান, স্টেনগান এভাবে বিক্রি হবে। পুলিশের নজরে এতদিন কীভাবে পড়েনি সেটাই বিস্ময়কর ব্যাপার। মন্দের ভালো তাও অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন তদন্ত করে দেখার বিষয় এর পিছনে আর কারা কারা আছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মকবুল নিজের বাড়িতে বসেই বোমা তৈরি করতেন। বোমা তৈরির পর সেই বোমার ছবি তুলে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিতেন মকবুল। অনলাইনে বোমা বিক্রির ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে ডিসকাউন্ট অফারও দিতেন। নির্দিষ্ট কিছু নিয়মিত ক্রেতাও ছিল মকবুলের।
তাদের ক্ষেত্রে একবারে বেশি পরিমাণ বোমা কিনলে ছিল বিশেষ অফার। কখনো কখনো গ্রাহকদের বোমার সাইজ এবং বোমার ইফেক্ট বোঝাতে ডেমনস্ট্রেশন করে দেখাতেন। গ্রাহক টানতে বোমার ছবির সাথে সেই ভিডিও পাঠাতে পাঠানো হতো গ্রাহকদের।
গ্রাহকরা বোমা কিনতে রাজি হলে কত পিস বোমা কিনবে তা লিখে পাঠাতে হতো মকবুলকে। পাল্টা ওই পরিমাণ বোমার বিনিময়ে ডিসকাউন্ট বাদ দিয়ে ঠিক কত দাম দিতে হবে তা গ্রাহককে লিখে পাঠাতেন মকবুল। সঙ্গে দেওয়া হতো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর এবং ইউপিআই আইডি। অনলাইনের মাধ্যমে গ্রাহক টাকা পাঠিয়েছে সেই তথ্য নিশ্চিত হলে প্যাকেজিং করে বোমা ক্রেতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন মকবুল।
প্রশাসনিক দুর্বলতার এমন সুযোগ ছেড়ে দেয়নি বিজেপি। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা কটাক্ষ করে বলেন, এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গেই সম্ভব। এতদিন আমরা বলতাম বাংলায় বোম শিল্প কুটির শিল্পে রূপ নিয়েছে। আজ কুটিরশিল্পের এমন বিকাশ হয়েছে যে, অনলাইনে অর্ডার আর হোম ডেলিভারি সম্ভব হচ্ছে। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কৃতিত্ব। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তো এই সরকারের নাম ওঠা উচিত।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে তৃণমূলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যেকোনো দলের রঙ, ধর্ম, বর্ণ না দেখে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রশাসন সতর্ক আছে। তাই দুষ্কৃতরা ধরা পড়েছে। এখন দেখার বিষয় এর মধ্যে বিজেপি জড়িত নয় তো? এরমধ্যে বিজেপির কালো হাত আমরা দেখতে পাচ্ছি। তারা রাজ্যকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে।