বাসটির পেছনে নম্বরপ্লেট নেই। সামনের নম্বরপ্লেটটি বাম্পারে ঢাকা। এ বাসেই তিন দিনের ব্যবধানে (১৯ মে ও ২২ মে) চট্টগ্রাম নগরে এক পোশাককর্মীকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং ছিনতাইয়ের পৃথক দুটি ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারী চক্রের তিন সদস্যকে গতকাল সোমবার রাতে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে, নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে বাসটি ব্যবহারের তথ্য।
পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল ওয়ারীশ জানান, ১৯ মে নগরের বাকলিয়া রাহাত্তারপুল এলাকায় চলন্ত বাসে ধর্ষণের চেষ্টা করায় চালককে ঘুষি মেরে লাফ দেন ১৯ বছর বয়সী এক পোশাককর্মী। সেদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও সিঅ্যান্ডবি এলাকার পোশাক কারখানা থেকে অন্য সহকর্মীর সঙ্গে বহদ্দারহাটের বাসায় ফিরছিলেন তিনি। বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন ওই পোশাককর্মী। ছয় দিন পর জ্ঞান ফিরলে পুলিশকে ঘটনার বিস্তারিত জানান তিনি।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, নম্বরপ্লেট আড়ালে রেখে একই বাস দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। দুটি ঘটনায় ওই বাসে আলাদা চালক ছিলেন। বাসটিকে আরও অপরাধে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তদন্ত করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসটির মালিক প্রবাসী। এটি দেখাশোনার জন্য এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বাসটি অপরাধের কাজে ভাড়া দিচ্ছেন, নাকি চালকদের অপরাধীরা ব্যবহার করছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে ধর্ষণ চেষ্টার ভিক্টিম ওই তরুণীর লাফ দেওয়ার সত্যতা পায় পুলিশ। এ ঘটনায় ওই পোশাককর্মীর মা বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। ২৫ মে রাতে হাটহাজারীর কুয়াইশ এলাকা থেকে বাসচালক আনোয়ার হোসেন এবং তাঁর সহকারী জনি দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই সঙ্গে জব্দ করা হয় ঘটনায় ব্যবহার করা বাসটি। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে জনি দাস এরই মধ্যে দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ছিনতাই ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা দুটি রাতে ঘটেছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল ওয়ারীশ। নগরবাসীকে গণপরিবহনে ওঠার আগে সামনে–পেছনে নিবন্ধন নম্বর লেখা আছে কি না, তা দেখার অনুরোধ করেন তিনি। আবদুল ওয়ারীশ বলেন, কোনো যানবাহনে নম্বরপ্লেট স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত না হলে চালক, মালিক দুজনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নম্বরপ্লেট ঢেকে যাতে কোনো ধরনের অপরাধের সুযোগ গাড়িচালকেরা না পান, সে জন্য সড়কে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাসটি বাকলিয়া থানা-পুলিশের হাতে জব্দ হওয়ার দুই দিন আগে ২২ মে রাতে ছিনতাইয়ে ব্যবহার করা হয়। নগরের পাহাড়তলী থানার অলংকার মোড় থেকে মো. পারভেজ নামের এক ব্যক্তি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি যাওয়ার জন্য ওই বাসে ওঠেন।
এটি কিছু দূর যাওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা তিন ছিনতাইকারী তাঁর কাছে থাকা মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে তাঁর হাত-পা বেঁধে নগরের খুলশী সেগুনবাগান এলাকায় ফেলে যান তাঁরা। পারভেজ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর অজ্ঞাতপরিচয় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় গত শুক্রবার মামলা করেন।
পরে পুলিশ সোমবার রাতে নগরের বাকলিয়া, কোতোয়ালি, পাহাড়তলী ও চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে আশরাফুল ইসলাম, মো. মিন্টু (বাসচালক), নাঈম উদ্দিন ও হাবিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই করা মুঠোফোন ও টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ছিনতাইকারীরা বাসটি ছিনতাইসহ নানা কাজে ব্যবহারের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।