একাডেমিক ফি জমা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রদলের এক কর্মী। একা পেয়ে তাঁকে বেদম পিটিয়েছেন ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ সময় হামলাকারীরা তাঁর মুঠোফোনও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, টিএসসিতে ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে শনাক্ত করতে পেরে ওই তরুণকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও থাপ্পড় মারতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলামের অনুসারীরা ইরফান সিকদারকে মারধরে অংশ নেন।
এ সময় তরুণের সঙ্গে থাকা একটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। রিয়াজুল ইসলামের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী তানভীর হাসান ওরফে শান্ত, কাওসার আহমেদ, ফারহান তানভীর ওরফে নাসিফ প্রমুখ এই মারধরে অংশ নেন। মারধর শেষে ওই ছাত্রলীগ কর্মীরা টিএসসিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে টিএসসির জনতা ব্যাংকের সামনে এই মারধরের ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের কর্মী ইরফান সিকদার। তিনি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের (দ্বিতীয় বর্ষ) ছাত্র।মারধরের সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন টিএসসির দ্বিতীয় তলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যাম্পাস প্রতিবেদকদের সঙ্গে মত বিনিময় করছিলেন। ওপর থেকে জানালা দিয়ে ঘটনাটি দেখতে পেলেও তাঁরা নেতা-কর্মীদের নিবৃত্ত করতে যাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এ এফ রহমান হল শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদলের ওই কর্মী ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে এসেছিলেন। ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তাঁকে প্রতিহত করেছেন। তবে ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না।
এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান বলেন, একাডেমিক কাজে যাওয়া ইরফান সিকদারের ওপর উপর্যুপরি হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। না দিলে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
এটা কোনো ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ভাষা হতে পারে না।ছাত্রদল নেতা আমানউল্লাহ বলেন, ‘ছাত্রলীগ তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে প্রতিরোধ করবে ইনশা আল্লাহ।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগে সম্প্রতি বিএনপির ছাত্রসংগঠনটির ওপর চড়াও হয়েছে ছাত্রলীগ। গত ২৪ মে ছাত্রদলের কয়েক শ নেতা–কর্মী টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলন করতে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়।
এক দিন পর ২৬ মে কার্জন হল এলাকায় ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ। এরপর সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে না গেলেও তাঁদের রুখতে প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছেন ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরা।