ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে র্যাবের উপর হামলা
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে র্যাব সদস্যদের ওপর হামলার নেতৃত্বে এক ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও র্যাব সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মো. তানভীর হোসেন ভূঁইয়া।
তিনি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তাঁর কাছ থেকে মাদক উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকার হন র্যাবের সদস্যরা। তানভীর ওই এলাকার মাদকসহ নানা অপরাধের নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিত বলে জানায় র্যাব। বারইয়ারহাট ও ফেনীর ছাগলনাইয়ার ঘোপাল ইউনিয়ন পাশাপাশি।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, র্যাবের কাছে তথ্য ছিল তানভীর তাঁর কিছু সহযোগী নিয়ে মাদকের ব্যবসা করেন। তানভীরের সহযোগী মো. ফরহাদ ও মো. সাকিবের কাছ থেকে ক্রেতা সেজে তথ্য সংগ্রহ ও মাদক কেনার জন্য যান বারাইয়ারহাটে সাদাপোশাকের র্যাব সদস্যরা।
র্যাব জানায়, তানভীর নিজেই তাঁর কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে ইয়াবা ও ফেনসিডিল দিতে আসেন। তাঁরা লোকজন মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ছিলেন। ওই সময় র্যাবের সদস্যরা তানভীরের এক সহযোগীকে আটকের চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে থাকা তানভীরসহ সহযোগীরা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করতে থাকেন। একই সময়ে একটি কাভার্ড ভ্যানে থাকা লোকজনও ডাকাত ডাকাত চিৎকার করে। এই চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে তানভীরের সহযোগীরা র্যাবের সদস্যদের ওপর হামলা চালান।
গত বুধবার সন্ধ্যায় মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর বাজারে শান্তিরহাট রাস্তার মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হামলার শিকার হন র্যাবের সদস্যরা। হামলায় দুই র্যাব সদস্যসহ তিনজন গুরুতর আহত হন। আহত র্যাব সদস্যরা বর্তমানে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে শুক্রবার মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানায় হামলা, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা করেছে। এই তিন মামলার মধ্যে দুটিতে (হামলা ও মাদক) তানভীরকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
র্যাবের সদস্যদের ওপর হামলার নেতৃত্বের অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. তানভীর হোসেন ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।পরে একই বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জিয়াউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি।
তবে তানভীরের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে না পারায় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ তানভীর মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশাসন তদন্ত করে বের করুক। তানভীর জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) নুরুল আবসার বলেন, ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত করে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।নুরুল আবসার আরও বলেন, হামলার সময় সাইদুর এক র্যাব সদস্যের কাছ থেকে একটি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যান।
পরে সাইদুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্রটি শাফায়েতের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ২ হাজার ইয়াবা বড়ি, ৫২ বোতল ফেনসিডিল ও ১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।র্যাবের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেনীর ছাগলনাইয়া ও মিরসরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সাইদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, এস এম শাফায়েত হোসেন, মফিজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, সোয়েব উদ্দিন, মো. সাইদুল ইসলাম, নাহিদ উদ্দিন, মো. আবু সাঈদ, নাসির উদ্দিন, মো. মাঈন উদ্দিন, হোসেন ও ফাহাদ।