টাঙ্গাইলের বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা তরুণী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন। আজ বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন।ওই তরুণীর অভিযোগ, মনজুর হোসেন এলাকার মাদকাসক্ত লোকজনদের দিয়ে তাঁকে মানসিকভাবে হয়রানি করছেন। নানাভাবে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁর ওপর যেকোনো সময় হামলা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
গত বছরের ২০ অক্টোবর এই কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে বলেন, মনজুর হোসেনের সঙ্গে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। বিয়ের কথা বলে তিনি তাঁর সরকারি বাসভবনে ডেকে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পারিবারিকভাবে তাঁর অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হলে তিনি বিয়ের জন্য ইউএনওকে বলেন।
মনজুর তখন তাঁকে বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে বলেন এবং টাঙ্গাইল শহরের পাওয়ার হাউসের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় তাঁরা দুই মাস থাকেন।ওই তরুণী আরও বলেন, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁকে (ছাত্রী) নিয়ে মনজুর হোসেন ভারতের কলকাতায় যান।
সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে হায়দরাবাদে যান। সেখানে থাকার সময় তরুণী পাসপোর্ট দেখে জানতে পারেন, মনজুর বিবাহিত। ওই বছরের ৫ অক্টোবর তাঁরা দেশে ফিরে আসেন। এর পর থেকে মনজুর তাঁকে এড়িয়ে চলতে থাকেন।
লিখিত বক্তব্যে ওই তরুণী বলেন, মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। এরপর মনজুর তাঁর (তরুণী) নামে ঢাকায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ওই মামলায় তরুণীর গ্রামের এমন একজনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে, যাঁর নামে থানায় মাদক, চুরি, ডাকাতি, হত্যা ও ধর্ষণের মামলা আছে। তাঁর দাবি, মনজুর ছবি এডিট করে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁকে নানা কায়দায় সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে।ওই তরুণী এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখা থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিন তদন্ত করেন। তদন্তে ওই তরুণীর সঙ্গে মনজুর হোসেনের অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে মো. মনজুর হোসেনকে বাসাইলের ইউএনও থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। চলতি বছরের ৪ মার্চ ইউএনও হিসেবে তাঁকে কিশোরগঞ্জের একটি উপজেলায় পদায়ন করা হয়। কলেজছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তাঁকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়।