অর্থ ও বাণিজ্যএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

মিরপুর-১১ নম্বরে নিউ ডিএনসিসি মার্কেট ২৫ বছর ধরে চলছে নির্মাণকাজ

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতায় ১৯৯৬ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। গণপূর্ত বিভাগ সিটি করপোরেশনকে এ জন্য ছয় বিঘা জায়গা দেয়। নকশা অনুযায়ী ছয়তলা মার্কেট ভবন নির্মাণ হওয়ার কথা।

নির্মাণকাজ চলার একপর্যায়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বিরোধ দেখা দিলে ১৯৯৮ সালে মার্কেটটির নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় পর্যন্ত ভবনের ভূগর্ভস্থ তলা (বেসমেন্ট) ও প্রথমতলার কাজ হয়েছিল।

২০০৫ সালে পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু হয়। ছয়তলা ভবনের কাঠামো নির্মিত হয়। কিন্তু চারপাশের দেয়াল নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ বাদ রেখেই ২০০৭ সালে আবার নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। ঠিকাদারেরা অতিরিক্ত অর্থ দাবি করায় কাজ বন্ধ হয়েছিল বলে জানা যায়।

দু্ই যুগ পেরিয়ে গেলেও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলো ধসে পড়ার উপক্রম। দেয়ালে শেওলা জমেছে, খসে পড়ছে পলেস্তারা। এদিকে মার্কেট না হলেও দোকান বরাদ্দের নামে নেওয়া হয়ে গেছে ১৪ কোটি টাকা। টাকা দেওয়ার এত দিন পরেও মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে নিউ ডিএনসিসি মার্কেটে দোকান বরাদ্দ পাননি ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজারের বেশি ব্যবসায়ী।

২০১১ সালে সিটি করপোরেশন বিভক্ত হলে মার্কেটের দায়িত্ব পায় ডিএনসিসি। নতুন নাম হয় নিউ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মার্কেট। এরপর উদ্যোগ নিয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি ডিএনসিসি। যদিও ২০১৫ সালের শেষে মার্কেটের চারপাশে দেয়াল নির্মাণের কাজ হয়। গত ১৩ বছরে মূল অবকাঠামোর কোনো কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন চাঁন মিয়া। তিনি নিউ সোসাইটি মার্কেট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি। চাঁন মিয়া বলেন, ‘দোকানের জন্য ধাপে ধাপে চারবার টাকা নিয়েছে সিটি করপোরেশন। অথচ দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার কোনো খোঁজ নাই। জানি না, আমাদের টাকাটা জলে গেল কি না।’

নিউ ডিএনসিসি মার্কেট-সংলগ্ন কাঁচাবাজারে ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করেন শাহেদ আলী (৭২)। তিনি বলেন, ‘অনেক বছর হইল টাকা জমা দিসি। টাকাও ফেরত দেয় না, দোকানও দেয় না, কিছু বলেও না। পরিত্যক্ত ভবনটিতে নেশাখোরদের আখড়া বসে এখন।’

মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অনুমোদিত ৩টি সমিতির ২ হাজার ৩৬৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসিত করতে তাঁদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে টাকা নেওয়া হয়, যার পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এর মধ্যে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সময় ১২ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ডিএনসিসির সময় ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। দোকান বুকিং দেওয়া ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ সোসাইটি ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, মিরপুর ১১ নম্বর মার্কেট ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি এবং নিউ সোসাইটি মার্কেট সমিতি।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন মার্কেটটি নির্মাণে ব্যয় করে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। পরে ডিএনসিসি ব্যয় করে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকারও বেশি।ডিএনসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমানে এর অবস্থান।

স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, এটা তো দীর্ঘদিনের সমস্যা। যখন নির্মাণকাজ করা হয়েছিল, তখন মনে হয় পাইলিংগুলো ঠিকমতো করা হয়নি। এটা ঝুঁকিপূর্ণ। দোকান বরাদ্দ না দেওয়া হলে যাঁরা টাকা জমা দিয়েছেন, তাঁদের টাকাগুলো ফেরত দেওয়া হোক।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা বলেন, ‘নির্মাণাধীন মার্কেটগুলোর কাজ শেষ করার জন্য আমরা দ্রুত উদ্যোগ নেব। এগুলো যেন টেকসই ও আধুনিক হয়, সেই বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি। মার্কেটের ব্যাপারে মাস্টারপ্ল্যানও করেছি। যেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলো ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে।’

Back to top button