শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় চোর শনাক্ত করতে তথাকথিত ইসরাফিল ফকিরের দেওয়া রুটি পড়া খেয়ে শওকত বেপারী (৫৫) ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আর মান্নান হাওলাদার (৬০) নামে আরেকজন বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মে দিবাগত রাতে জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের কালু বেপারীর কান্দি শওকত বোপারী ও মান্নান হাওলাদারের প্রায় ৯ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি গরু চুরি হয়ে যায়। পরে গরুর মালিকরা চোর ধরার জন্য পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার টেকেরহাটের দিগনগর-নিশ্চিন্তাপুর এলাকার মৃত রাজ্জাক ফকিরের ছেলে ইসরাফিল ফকিরের শরণাপন্ন হন। ইসরাফিল ফকির ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি ডিম ও দুই ধরনের আটা পড়ে দেন।
এক ধরনের আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে এলাকার মানুষকে খাওয়াতে বলেন এবং অন্য ধরনের আটার রুটি গরুর মালিকদের খেতে বলেন। ২২ মে রবিবার সকাল ৮টার সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে শওকত ও মান্নানও রুটি খান। এর ২০ মিনিট পরেই শওকত বেপারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরেকজন মালিক মান্নান হাওলাদার খাওয়ার পরে ব্যক্তিগত কাজে শরীয়তপুর যাওয়ার পথে প্রেমতলা নামক স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে সে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
সোমবার (২৩ মে) বিকালে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর আগে রবিবার (২২ মে) সকাল ৮টার সময় জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়নের কালু ব্যাপারীর কান্দি এ ঘটনা ঘটে।ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান, আমরা থানায় এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করিনি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থায় যাবো।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘তথাকথিত ফকিরি চিকিৎসা একটি অপচিকিৎসা। এ ধরনের চিকিৎসার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের অপচিকিৎসা থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’
এলাকাবাসীর ধারণা, দুই ধরনের রুটির মধ্যে যে রুটি এলাকাবাসীকে খাওয়ানোর কথা ছিল ভুলবশত সে রুটি মালিকপক্ষ খেয়ে ফেলেছেন। হয়তো রুটির মধ্যে বিষাক্ত কিছু মেশানো ছিল। এটা জানার জন্য কথিত ফকির ইসরাফিলের মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জাজিরা থানার উপ-পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা কোনো অভিযোগ করেনি। তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করতে চেয়েছিল। আমরা লাশ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেছি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ‘তথাকথিত ফকিরের রুটি পড়া খেয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এটি সম্পূর্ণ প্রতারণা। তবে ভুক্তভোগীরা আইনি সহায়তা চাইলে যথাযথ আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে।’