উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু দেশে গত মে মাসের শুরু থেকে মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত হয়েছে। আফ্রিকার কিছু অংশেও স্থানীয় এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এখন এটা আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশে উদ্বেগ বেড়েছে। তবে আশার কথা, এই রোগে সংক্রমিত রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠে। এ রোগে বিরল কিছু ক্ষেত্রেই কেবল মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
মাঙ্কিপক্স হলো একটি ভাইরাস, যা পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এর লক্ষণগুলো গুটিবসন্তের মতোই। জ্বর, গায়ে ব্যথা, আকারে বড় বসন্তের মতো গায়ে গুটি ওঠাকে আপাতত মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ রোগে প্রাণহানির সংখ্যা খুবই কম।
আফ্রিকায় দড়ি কাঠবিড়ালি, গাছ কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ান ইঁদুর, ডর্মিসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বানর এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য বলছে, এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটলেও তা সীমিত সংখ্যায় হয়ে থাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকা অঞ্চলে মাঙ্কিপক্সের হাজারো রোগী শনাক্ত হলেও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল না। আজ শুক্রবার ফ্রান্সে মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত প্রথম রোগী পাওয়া গেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি ও পর্তুগালে এই রোগ শনাক্ত হয়েছে।
রক্ত, শারীরিক তরল ও সংক্রমিত প্রাণীর শ্লেষ্মার সরাসরি সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ ছাড়া শ্বাস–প্রশ্বাস, সংক্রমিত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষত বা তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সংস্পর্শে এলে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
ড্রপলেট থেকে এই রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে বলে স্বাস্থ্যকর্মী, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও ঝুঁকিতে থাকেন। গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, যুক্তরাজ্যে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষ থেকে পুরুষে শারীরিক সংসর্গে এই রোগ ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো এ বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মাঙ্কিপক্সের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর। তবে গুটিবসন্ত বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রায় নির্মূল হওয়ায় এর টিকা পাওয়া এখন কঠিন। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এরিক ফিগেল–ডিং বলেন,গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কার্যকর এটা ভালো সংবাদ। তবে খারাপ সংবাদ হচ্ছে, ৪৫ বছরের নিচে অনেকেরই এই টিকা দেওয়া নেই।
এই রোগ সাধারণত উপসর্গ দেখা দেওয়ার দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে এই সময় বেশি হয়। তবে ভাইরাস ছড়ানোর মাত্রা, রোগীর শারীরিক অবস্থা ও কী কী জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার ওপর এর ভয়াবহতা নির্ভর করে।
মাঙ্কিপক্সের একটি রূপ এতটাই ভয়ংকর যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ এতে মারাও যেতে পারেন।যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সিমন ক্লার্ক বলেন, পশ্চিম আফ্রিকার একটি ধরনে মৃত্যুহার ১ শতাংশ। এটি যুক্তরাজ্যে ছড়িয়েছে। কঙ্গো অঞ্চলের একটি ধরনের মৃত্যুহার ১০ শতাংশ।
মানবদেহে মাঙ্কিপক্স প্রথম শনাক্ত করা হয় ১৯৭০ সালে জায়ারে। দেশটি এখন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো নামে পরিচিত। সেখানে ৯ বছর বয়সী এক শিশুর এই রোগ শনাক্ত হয়। এর দুই বছর আগেই দেশটি থেকে গুটিবসন্ত বিদায় নিয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ে। দেশগুলো হচ্ছে বেনিন, ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, গ্যাবন, আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, রিপাবলিক অব কঙ্গো, সিয়েরা লিওন ও সাউথ সুদান। ২০০৩ সালে আফ্রিকার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই রোগ শনাক্ত হয়।