তিনি রীতিমতো খাতা-কলমে হিসাব কষে নিজের ‘পার্সেন্টেজ’ আদায় করেন
![তিনি রীতিমতো খাতা কলমে হিসাব কষে নিজের ‘পার্সেন্টেজ আদায় করেন](/wp-content/uploads/2022/05/তিনি-রীতিমতো-খাতা-কলমে-হিসাব-কষে-নিজের-‘পার্সেন্টেজ-আদায়-করেন-png.webp)
টাকা ছাড়া কোনো ফাইলেই হাত দেন না তিনি। রীতিমতো খাতা-কলমে হিসাব কষে নিজের ‘পার্সেন্টেজ’ আদায় করেন। চাহিদামতো টাকা না দিলে ফাইল আটকে রেখে অসদাচরণ, হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গত বছর ১৩ জুন বাঘাইছড়ি উপজেলায় হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের দায়িত্ব নেন পেয়ার মোহাম্মদ। এর আগের জেলার কাপ্তাই উপজেলায়ও তাঁর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ছিল।এদিকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পেয়ার মোহাম্মদের ঘুষ আদায়ের একটি ভিডিও বের হয়েছে।
এতে দেখা যায়, বিভাগীয় কর্মকর্তার নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতাদের কাছে ‘২০ শতাংশ’ ঘুষ দাবি করছেন পেয়ার মোহাম্মদ। তিনি বলছেন, ‘টাকা নিয়ে আসেন, তিন দিনের ভেতর বিল পাস করে দেব। জুন মাসের আগে চাহিদামতো টাকা না দিলে বরাদ্দের টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেব, তখন আগামী আগস্টের আগে টাকা পাবেন না।’
এমন অভিযোগ উঠেছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পেয়ার মোহাম্মদের বিরুদ্ধে। বিভাগীয় ও জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। এ নিয়ে উপজেলার শিক্ষক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, পেনশনভোগী কর্মচারীর সঙ্গে ঝামেলাও হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার অফিসের তিনজন কর্মচারী ও আমার কাছ থেকে মোট ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে নতুন পে-স্কেলে বেতন নির্ধারণ করে দেন হিসাবরক্ষক। এক মাস পরই বেতন বন্ধ করে দেন। কারণ জানতে চাইলে বিভাগীয় কর্মকর্তার দোহাই দেন। তিন মাস বেতন বন্ধ রাখার পর সিজিএ থেকে চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সব ঠিকঠাক হয়ে বেতনের চিঠি এলে তিনি আবার আড়াই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়াস চাকমা বলেন, ‘হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা প্রতিটি বিলের জন্য পাঁচ থেকে দশ শতাংশ ঘুষ দাবি করেন। চাহিদামতো টাকা না দিলে সব বিল, বরাদ্দ আটকে রেখে হয়রানি করেন। হিসাব কষে ১০ শতাংশ টাকাসহ দিতে হয়। পেনশন ভাতাভোগীদের কাছ থেকেও প্রতি মাসে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেটে রাখেন।’
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই মাসে তিনি টাকার জন্য চাপ দেন। টাকা দিতে পারব না বলায় ছয় মাসের বেতন বন্ধ করে রাখার হুমকি দিয়ে আমাকে পূর্বের পে-স্কেলে নামিয়ে দেন। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি, এখনো প্রতিকার পাইনি।’
বাঘাইছড়ি ইউএনও শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পেয়ার মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযোগ পাচ্ছি। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। তিনি ঠিকমতো অফিস করেন না। মানুষকে হয়রানির লিখিত অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ জানতে চাইলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পেয়ার মোহাম্মদ সংবাদ প্রচার না করতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘বাঘাইছড়ি কি ভালো জায়গা নাকি! এখানে থাকার আর ইচ্ছে নাই। এক মাসের মধ্যে বদলি হয়ে যাব।’অভিযোগের বিষয় জানতে বিভাগীয় ও জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে বারবার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।