দুর্ঘটনায় স্বামী হারানোর এক দিন পরেই রাহিমা খাতুনের কোলজুড়ে এল নতুন অতিথি। আজ সোমবার বিকেলে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন রাহিমা। তবে পিতা সন্তানের মুখ দেখে যেতে না পারার আক্ষেপে পুড়ছে পরিবারটি। আর সন্তানের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছেন রাহিমা।
পরিবারের লোকজন জানান, আজ সোমবার দুপুরে আলমগীর হোসেনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাহিমা খাতুনের প্রসব ব্যথা ওঠে। তাঁকে উপজেলার ভবানীগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিকেলে পুত্রসন্তান প্রসব করেন তিনি। নবজাতকের ওজন প্রায় তিন কেজি। রাহিমা ও তাঁর সদ্যভূমিষ্ঠ ছেলে সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বজনেরা।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর মোহনগঞ্জ–খড়খড়ি সড়কের রামচন্দ্রপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান আলমগীর হোসেন (২৬)। তিনি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে। তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান আলমগীরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম।
দেড় বছর আগে উপজেলার দানগাছি গ্রামের রাহিমা খাতুনকে বিয়ে করেন আলমগীর। তাঁর মা ফেরদৌসি রেজাউল করিম বলেন, নাতির নাম রেখেছেন আবদুর রহমান। আকিকার মাধ্যমে নামটি রাখা হবে। আলমগীর বেঁচে থাকলে এই নামই রাখত। তাই নামটি রাখা হয়েছে। নাতিকে পেয়ে শোকটা কিছুটাও লাঘব হবে। নাতি ও পরিবারের সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি।
রাহিমার বড় ভাই মতলেবুর রহমান বলেন, তাঁর বোন ও ভাগনে এখন সুস্থ আছে। সন্তানকে পেয়ে তাঁর বোন খুশি। তবে সন্তানের দিকে তাকিয়ে অঝোরে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে তাঁর। ঘটনার পর থেকে তাঁর বোন জোরে কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। নির্বাক হয়ে আছেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে রাহিমা খাতুন প্রায় বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন। বাবা সন্তানকে দেখে যেতে পারলেন না, এটাই তাঁর দুঃখ।
রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন আলমগীর। গত শনিবার সকালে জাহাঙ্গীর আলম বাড়ি থেকে রাজশাহী কলেজে যান। স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়ে সন্ধ্যার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়িতে ফিরছিলেন। সন্ধ্যার দিকে মোহনগঞ্জ-খড়খড়ি সড়কের রামচন্দ্রপুর মোড়ে পৌঁছালে অটোরিকশার চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
এতে অটোরিকশার সামনে বসা আলমগীর হোসেন ছিটকে সড়কে পড়ে যান। এ সময় একই দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যান তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে চলে গেলে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। রোববার সকালে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।