অন্যান্য দলঅপরাধআওয়ামী লীগএক্সক্লুসিভকুমিল্লাচট্টগ্রামবাংলাদেশরাজনীতি

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ দুইজনকে গুলি করার অভিযোগে এলডিপি’র মহাসচিব গ্রেপ্তার

কুমিল্লার চান্দিনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ দুইজনকে গুলি করার অভিযোগে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।আজ সোমবার বেলা আড়াইটায় চান্দিনা পৌর ভবন-সংলগ্ন চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ এর সামনে ওই ঘটনা ঘটে। রেদোয়ান নিজ গাড়িতে বসে নিজের পিস্তল দিয়ে গুলি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা হলেন চান্দিনা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সদস্য রূপনগর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে মাহমুদুল হাসান ওরফে জনি সরকার (২২)। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। অপরজন হলেন উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চান্দিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন (২৮।

অভিযোগ প্রসঙ্গে রেদোয়ান আহমেদ গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, কলেজে এলডিপির পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান ছিল। এতে তাঁকে প্রধান অতিথি করে পৌর এলডিপি। এরই মধ্যে কলেজের প্রধান ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়। দুপুরে তিনি ক্যাম্পাস-২ এর সামনে গেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের লোকজন তাঁর গাড়িতে হামলা করে। তিনি আত্মরক্ষায় লাইসেন্স করা শটগান থেকে গুলি চালান, পরে থানায় এসে আশ্রয় নেন।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার সকাল থেকে চান্দিনা পৌরসভা সড়কের লাগোয়া পৌর ভবনের পাশে রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ক্যাম্পাস-২ এর মমতাজ আহমেদ ভবনে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন।

বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে আসার পর কলেজ ফটকে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা রেদোয়ান আহমেদের গাড়ি থামিয়ে কথা বলেন।কিছুক্ষণ পরে রেদোয়ান আহমেদের গাড়ি ঘুরে চলে যাওয়ার সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই গাড়িতে তরমুজ ছুড়ে মারেন।

এ সময় রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি থেকে পরপর দুটি গুলি ছোড়েন। এতে মাহমুদুলের হাতে ও নাজমুলের পায়ে গুলি লাগে। পরে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে ধাওয়া করেন। এরপর তিনি চান্দিনা থানায় গিয়ে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে রেদোয়ানকে গ্রেপ্তার ও গুলি ছোড়ার বিচার দাবি করেন। এরপর পুলিশ রেদোয়ানের বিরুদ্ধে মামলা নেয় ও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, রেদোয়ানের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিকেলে তাঁকে কুমিল্লার আদালতে নেওয়া হয়। রেদোয়ান আহমেদ স্বপ্রণোদিত হয়ে গুলি করেন। তাঁর গাড়িতে হামলার কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গাড়িটি অক্ষত ছিল। কি কারণে তিনি গুলি করলেন, তা বুঝতে পারছেন না। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল খন্দকার অভিযোগ করেন, চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ছাত্রলীগ ঈদের আগে থেকে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দেয়। আজ সোমবার ওই অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। এরই মধ্যে পৌর এলডিপি একই দিন একই স্থানে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে।

সোমবার দুপুর থেকে ছাত্রলীগের আয়োজনে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা যখন মমতাজ আহমেদ ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন। আড়াইটার দিকে রেদোয়ান আহমেদ গাড়ি নিয়ে ওই ক্যাম্পাসের সামনে এসে গাড়িতে বসে দুটি গুলি ছুড়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। গুলিতে জনি ও নাজমুল গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁদের উন্নত চিকিত্সার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আজ সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে, শয্যায় কাতরাচ্ছেন মাহমুদুল ও নাজমুল।মাহমুদুল বলেন, ‘আমরা কলেজের সামনে দাঁড়ানো ছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ হাতে এসে গুলি লাগলো। গুলিতে ডান হাত থেকে রক্ত ঝরল। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। বিনা অপরাধে আমাকে গুলি করা হয়।’নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমিও কলেজ এলাকায় দাঁড়ানো ছিলাম। ডান পায়ে হঠাৎ গুলি লাগল। এই ঘটনার বিচার চাই।’

Back to top button