ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ ধেয়ে আসছে ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ ও ওডিশার দিকে। কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, কাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এরপর এটি ওডিশার দিকে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এ অঞ্চলে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় অশনি আন্দামানের রাজধানী পোর্টব্লেয়ার থেকে ৫০০, অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপট্টনম থেকে ৮১০ এবং ওডিশা রাজ্যের পুরি থেকে ৮৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে।পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এসব এলাকার প্রশাসনকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
কাল থেকে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনকে রাজ্য সচিবালয় নবান্ন থেকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের মতো এই ঝড়কেও মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পৌর করপোরেশনের কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। বিপজ্জনক বিদ্যুতের খুঁটির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসন থেকে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুমি, ঘোড়ামারা দ্বীপসহ সুন্দরবন এলাকার নামখানা, সাগর, পার্থপ্রতিম এলাকায়ও নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করা হয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী নিচু এলাকার মানুষকে প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সচিবালয় নবান্ন এবং পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল এনডিআরএফ, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দল এসডিআরএফসহ উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং ভারতের নৌবাহিনীকে।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিভিন্ন এলাকার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রকে। জেলা সদরে মজুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, পানীয় জলসহ তাঁবু ও অন্যান্য সামগ্রী।ঝড় শুরু হলে স্থানীয় স্কুল–কলেজে আশ্রয় নিতেও বলা হয়েছে।
১৫ মে পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে না যেতে মৎস্যজীবীদের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ কার্যকর হবে আজ ৯ মে থেকে। দিঘা, মন্দারমণি, শংকরপুর, তাজপুরসহ সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন জনপদে মাইকযোগে প্রচার শুরু করা হয়েছে এই অশনি নিয়ে। বলা হয়েছে, ১০ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টিসহ দমকা হাওয়া বইতে পারে।
পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর, শংকরপুর, রামনগর—সমুদ্র উপকূলবর্তী এসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের ২৪টি দল কাজ করছে।পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজি বলেন, অশনি মোকাবিলায় সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিপজ্জনক গাছ কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নদী রক্ষা বাঁধ মেরামত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপকূলবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান হতে বলা হয়েছে। থাকতে বলা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। আর যেসব জেলে সমুদ্রে মাছ ধরতে গেছেন, তাঁদের আজকের মধ্যে ফিরে আসারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।