প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ এশিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ও জনস্বাস্থ্যবিদদের কেউ কেউ করোনা মহামারির আরও একটি ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ভারতের তথ্য না থাকলেও ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, দেশটির কয়েকটি রাজ্যে সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিনি বলেন, কোভিড সমস্যা শেষ হয়নি। কয়েকটি রাজ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ওই পর্যালোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল ও পাঞ্চাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান উপস্থিত ছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ এপ্রিল দেওয়া সর্বশেষ বৈশ্বিক হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছিল, ২৪টি দেশে করোনা সংক্রমণ আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সময়ে চীনে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ শতাংশ।
গতকাল বুধবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কান্ট্রি ডিরেক্টর নিলি কায়ডোস–ড্যানিয়েলস বলেন, করোনা মহামারির চতুর্থ ঢেউয়ের ঝুঁকি আছে। তবে আগের ঢেউগুলোর তুলনায় তার তীব্রতা কম হতে পারে।
চতুর্থ ঢেউয়ের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, মহামারিতে তিন থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। ওই সময় বিবেচনায় নিলে আরেকটি নতুন ঢেউয়ের কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে বা মে মাসের শেষের দিকে সংক্রমণ বাড়তে পারে।
মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনায় কোনো মৃত্যু নেই। সংক্রমণের এই প্রবণতা এক মাসের বেশি সময় ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে। জীবনযাপন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। স্বস্তির পরিবেশ ফিরে এলেও মানুষের মন থেকে শঙ্কা পুরোপুরি দূর হয়ে যায়নি। এরই মধ্যে চতুর্থ ঢেউয়ের কথা আলোচনায় এসেছে।
বিষয়টি নিয়ে সরকারও চিন্তিত। ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির কাছে মতামত জানতে চায়। কমিটি ২৪ এপ্রিল সভা করে সরকারকে বলেছে, এখন থেকেই সতর্ক না হলে বাংলাদেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।
সংক্রমণ বেশি, এমন দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক বন্দরে স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিশ্চিত করা, ঈদের বাজারে ও ঘরমুখী মানুষের মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং জোরদার করার সুপারিশ করেছে কমিটি। পাশাপাশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখারও পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনার চতুর্থ ঢেউ নিয়ে কী ভাবছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, ‘চতুর্থ ঢেউ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। তবে ভারতে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশে ঝুঁকি বাড়ে। আমরা সতর্ক আছি, সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার কথা বলেছি। মাস্ক পরার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম ঝুঁকির কারণ করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বা ভেরিয়েন্ট। করোনার ডেল্টা ধরনের কারণে দেশে সংক্রমণ যেমন বেড়েছিল, মৃত্যুও বেড়েছিল। সর্বশেষ করোনার ধরন অমিক্রনের কারণে দেশে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়ায়। তবে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো ভেরিয়েন্টের (ভেরিয়েন্ট অব কনসার্ন) খবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেয়নি।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছি। ভেরিয়েন্টের ব্যাপারে জানতে নিয়মিত জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে।’তবে একাধিক জনস্বাস্থ্যবিদ বলছেন, দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। নতুন করে সংক্রমণ বাড়লেও তা খুব বিস্তৃত হবে না। পাশাপাশি রোগের তীব্রতাও কম হবে বলে আশা করা যায়।