‘আমরা যদি এই ময়দানে না-ই খেলবো! এই ময়দানে তো আমরা কোনোদিন খেলতেই পারি না। আমরা খেলা খেলবো না, তাহলে পড়ালেখার কি অবস্থা হবে। মোবাইল চালাবো, কম্পিউটার চালাবো, ভুলভাল খেলবো। তারপর ভুলভাল খেলে যখন মরবো তখন বলবেন তোমরা এখানে ভুলভাল খেলছিলা।
কথাগুলো সাবলিল ভাষায় ক্যামেরার সামনেই বলছিল এক শিশু। বয়সও খুব বেশি না, হয়তো ৮/৯ বছর। তেঁতুলিয়ার একটি খেলার মাঠ রক্ষায় মানববন্ধনে এসেছিল শিশুটি। নবকুমার ইনস্টিটিউশন ও ড. শহীদুল্লাহ কলেজ, বখশিবাজার শাখার ব্যানারে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখে শিশুটি। যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমর সবচেয়ে আলোচনার খোরাক। তবে শিশুটির পরিচয় এখনো মেলেনি।
সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলায় একটি খেলার মাঠে থানা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নানান আলোচনা জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে শিশু থেকে তরুণ, তরুণ থেকে তরুণী, তরুণী থেকে বৃদ্ধসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তবুও থামেনি নির্মাণ কাজ!
ওই বালক আরো বলেন, আপনারা কেন মাঠ বন্ধ করতেছেন, আমার বাবার বাবা মানে আমার দাদা পর্যন্ত এখানে খেলেছিলেন। এতো প্রাচীন এই মাঠ, এতো শত বছর আগের এই মাঠ, আপনারা এটাকে এখন কিভাবে ধ্বংস করবেন?এদিকে আজ বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠটি কখনো মাঠ নয়, পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। আ
পাতত থানার জন্য এটাই নির্দিষ্ট জায়গা। বরাদ্দ হওয়ায় জায়গাটি পুলিশেরই। মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, পরিবেশবিদ রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিবসহ পরিবেশবিদ এর সঙ্গে সভা করার পরই এই বক্তব্য দেন মন্ত্রী।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আরো বলেন, কলাবাগান তেঁতুলতলা যে মাঠ নিয়ে আন্দোলন চলছে, সেটি কখনোই মাঠ ছিল না।
এটি একটি খাসজমি। জেলা প্রশাসক এটি বরাদ্দ দিয়েছে থানা ভবন নির্মাণের জন্য। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় থানা ভবন নির্মাণ অত্যন্ত দরকার। যে কারণে ২৭ কোটি টাকায় বরাদ্দ পেয়ে এই টাকা দিয়ে জায়গাটি কেনা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। থানা ভবন নির্মাণের জন্য এর চেয়ে সুন্দর জায়গা পেলে বিকল্প সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত এটি পুলিশের সম্পত্তি।
জানা যায়, ঢাকা শহর থেকে গত ২০ বছরে ১২৬টির বেশি মাঠ হারিয়ে গেছে। ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি মাঠের সংখ্যা এখন ২৩৫টি। এর ১৪১টি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ। কলোনির মাঠ আছে ২৪টি, ঈদগাহ মাঠ আছে ১২টি। এর মধ্যে একটি হলো পুরান ঢাকায় ধূপখোলা মাঠ। এখানে ক্রিকেট-ফুটবল চলত একসঙ্গে। পুরান ঢাকায় খেলোয়াড় তৈরির অন্যতম আঁতুড়ঘর বলা হয় এই মাঠকে।
গত বছর সেটিরও বড় অংশ ঢুকে গেছে সিটি করপোরেশনের বাণিজ্যিক প্রকল্পে। পুরান ঢাকায় নবকুমার স্কুলের উল্টো দিকে আরো একটি বিশাল মাঠ ছিল আলিয়া মাদরাসার। একটা সময় সারা দিন এই মাঠ জমজমাট থাকত খেলোয়াড়দের দাপাদাপিতে। সেটিকে অস্থায়ী আদালতে রূপ দেওয়া হয়েছিল। সেই পর্ব শেষ হওয়ার পর এখনো মাঠে প্রবেশাধিকার মেলেনি সাধারণের।