ঈদের পোশাক হিসেবে সালোয়ার-কামিজ-ওড়না আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। মেয়েদের ঈদ শপিংয়ের তালিকায় সালোয়ার-কামিজের অবস্থান থাকে ওপরের দিকে। দুই বছর করোনাকাল কাটিয়ে এবারের ঈদের খুশির কলেবর খানিকটা বেশি। সালোয়ার–কামিজের সাম্রাজ্যেও লেগেছে এই ঢেউ।
বাজার ঘুরে দেখা গেল ট্র্যাডিশনাল ক্লোথিং ব্র্যান্ডগুলোর প্রায় শতভাগেই রয়েছে এই পোশাকের আয়োজন। গজ কাপড়ে মাপমতো সালোয়ার–কামিজ বানিয়ে নেওয়ার সময় এবার শেষ প্রায়। দরজি বাড়িতে ছোটাছুটি শেষে এবার সময় করে তৈরি সালোয়ার স্যুট কিনে নেওয়ার পালা।
এবার কামিজের নেকলাইনে দেখা যাচ্ছে একটু বিস্তৃত নকশার ব্যবহার। বোট গলা ব্যবহার করে কামিজে ভিন্নতা আনার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। রাউন্ড নেকের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে প্রচুর। কিছু পোশাকের ক্ষেত্রে নেক লাইনের সামনের অংশ কেটে নিয়ে বোতাম ব্যবহারে সৃজনশীলতার প্রকাশ করা হয়েছে।
নেকলাইনে দেখা যাচ্ছে সুই–সুতার হাতের কাজ, মেশিন এমব্রয়ডারি, বর্ডার, ইয়ক। কাটের ক্ষেত্রে রাউন্ড, ডিপ রাউন্ড, কলারড। ক্লোজড নেকলাইনের ব্যবহার এবার খানিকটা কম। নচ নেকলাইন ব্যবহার করেছে বেশ কিছু ব্র্যান্ড। ম্যান্ডারিন ডিজাইনের নেকলাইন এখনো বেশ জনপ্রিয়।
আয়োজনে দেখা যাচ্ছে ফেব্রিকের ভিন্নতা। তালিকা করে যদি বলি, তাহলে বলতে হবে, সুতি, লিনেন, সিল্ক, টিস্যু, ভিসকস, জর্জেট, অরগাঞ্জা ব্যবহৃত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এবারের ঈদ উদ্যাপিত হবে বৈশাখ মাসে। উষ্ণতা ছড়াবে তপ্ত সূর্য, এমনটা ভেবে নিয়েই পোশাকের বাজারে সালোয়ার–কামিজের পসরা সাজিয়েছে দেশি ব্র্যান্ডগুলো।
একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হয়েছে দুই বছরের করোনাকাল কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে এবার সবাই উদ্যাপন করবেন ঈদ। তাই পোশাকে উৎসবের ছোঁয়া চাই-ই চাই। দাওয়াত, ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা এসবে এবার মুখর সময় কাটবে, তাই আরাম আর উৎসব-আভিজাত্যের শৈল্পিক মিশ্রণের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ফেব্রিক বেছে নেওয়া থেকে শুরু করে পোশাকের নকশাতে।
নতুনত্বে দেখা যাচ্ছে ক্রু নেকলাইন, হল্টার নেকলাইন, স্কুপ নেকলাইনের ব্যবহারে।সালোয়ার, কামিজ এবং ওড়না—এই তিনের মধ্যে সালোয়ারে গঠনগত নকশা এবার বেশ বৈচিত্র্য নিয়ে হাজির হয়েছে। এ লাইন শেপ কামিজ দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
লং ফ্রক এবার সে তুলনায় একটু কম। কিন্তু নেই বললে চলবে না। স্লিভের দৈর্ঘ্য কনুইয়ের নিচ অবধি নামছেই। ওপরে উঠছে কম। হাতার কাটে দেখা যাচ্ছে থ্রি–কোয়ার্টার, বেল স্লিভ, পাফড স্লিভ। আর অল্প কিছু দেখা যাচ্ছে লং ফিটেড, রাগলান, বিশপ, অ্যাঞ্জেল।
সালোয়ারে ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া গেছে। নানান কাট ব্যবহার হয়েছে ডিজাইনার ব্র্যান্ডে। সব নকশাই উপমহাদেশে আগে থেকে পরিচিত। প্যান্ট কাট সালোয়ার দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। স্ট্রেট কাটে বেশ মন টানছে ক্রেতাদের। ঘেরে রয়েছে বিচিত্রতা।
কোনোটা একটু আঁটসাঁট তো কোনোটা ঢিলেঢালা। সিগারেট প্যান্ট এবারও বেশ রাজত্ব করছে। চুড়িদার কিন্তু অল্প হলেও আছে। সারারার ব্যবহার এবারের জনপ্রিয় ট্রেন্ড। অনেক ধরনের সারারা দেখা যাচ্ছে। অনেকে কামিজের সঙ্গে স্কারটও পরছেন। লেগিংস তাঁর ক্রেতাপ্রিয়তা হারায়নি। হারেম সালোয়ারও রয়েছে।
এবারের দেশি ব্র্যান্ডের থ্রি–পিসে কামিজের নিচের অংশে ফ্রিল ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে বর্ডারের ব্যবহার। এক লাইন থেকে শুরু করে কয়েক লাইনের বর্ডার বেশ চোখে পড়ছে। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় কলিদার কামিজ ফিরে আসার ইশারা দিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে বাজার ঘুরে। কারণ, পরিমাণে অল্প হলেও কয়েকটি ব্র্যান্ড নিয়ে এসেছে কলিকাট কামিজ।
ওড়না তৈরির ক্ষেত্রে সুতি, জর্জেট আর শিফনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। টিস্যু, অ্যান্ডি সিল্ক ব্যবহারে বেশ কিছু ওড়না তৈরি হয়েছে এবার। ওড়নায় করা হচ্ছে পাইপিং ও টাসেলের ব্যবহার। এতে বেশ উৎসবের ভাব তৈরি হচ্ছে পোশাকে। ওয়ান কালার ওড়নার পরিমাণ কম। অলংকৃত ওড়না তুলনামূলক বেশি। হতে পারে সেটা স্ক্রিনপ্রিন্ট, ছাপচিত্র কিংবা টাইডাই। আবার সিঙ্গেল কালার ওড়নাতে দেখা যাচ্ছে বেশি প্রস্থের বর্ডারের ব্যবহার।