অপরাধএক্সক্লুসিভবাংলাদেশসিলেটহবিগঞ্জ

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখানে তরূণীর উপর নৃশংসতা

হবিগঞ্জে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর ওপর নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে কুপিয়ে হাতের কবজি, স্তনসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম করেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন তরুণীর বাবা। মামলার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয় তরুণীর শরীরে ৬০টি সেলাই লেগেছে। তবে পুলিশ বলছে, ২০০টিরও বেশি সেলাই লেগেছে।

আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী তরুণীর বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, তরুণীর শারীরিক অবস্থা এখনো ভালো না। বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। তাঁর মা পাশে বসে চিনি মিশ্রিত পানি পান করাচ্ছেন।তরুণীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বাবা হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড এলাকায় তালুকদার কেমিক্যালে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর মা নোয়াপাড়ার একটি গার্মেন্টসের শ্রমিক।

তিন ভাইবোনের মধ্যে ওই তরুণী সবার বড়। ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আর্থিক দুরবস্থার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি সংসার সামলাচ্ছেন। তাঁর ছোট বোনের বয়স ১৬ বছর। সে স্থানীয় একটি স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাইয়ের বয়স ৭ বছর। 

গত ১৯ এপ্রিল ভোররাতে মাধবপুর উপজেলায় এ ঘটনার পর এক সপ্তাহের চিকিৎসা নিয়ে ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে সোমবার বিকেলে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি করা হয় স্থানীয় যুবক সুমন (২২) ও নাইমসহ (২১) আরও ছয়জনকে। 

ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বলেন, ‘১৭ এপ্রিল ভোররাতে আমার মেয়ে সাহরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে ওঠে। হাত-মুখ ধোয়ার জন্য ঘরের বাইরে টিউবওয়েলের কাছে গেলে গ্রামের মারুফ মিয়ার ছেলে সুমনসহ কয়েকজন মেয়েকে জাপটে ধরে। একপর্যায়ে তারা ধারালো ছুরি দিয়ে দুই স্তনসহ মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়।’ 

আক্রমণের শিকার ওই তরুণী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সুমন আমাকে বিরক্ত করত। প্রথমে সে নাম পরিচয় না দিয়ে আমার দরজার সামনে চিঠি রাখত। পরে সে তার নাম্বার দিয়ে চিঠি রাখত। আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করি না। কয়েক দিন পর আমাকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি তাকে না করে দেই। তখন সে আমাকে বলেছে আমার জীবন নষ্ট করে দেবে। কিন্তু লজ্জায় আমি কাউকে কিছু বলি না। 

ওই তরূনীর বাবা আরও বলেন, ‘মেয়ের চিৎকারে পরিবারের সদস্য ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকেরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।’ 

তরুণী আরও বলেন, ‘১৯ তারিখ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরের পাশেই টিউবওয়েলে হাত মুখ ধুতে যাই। মুখ ধুয়ে আসার সময় টিউবওয়েলের কাছেই আমার ওপর হামলা চালায় সুমন। এ সময় তার সাথে নাইম ছিল। প্রথমে আমার পিঠে ও বুকে কোপ দেওয়ার পর আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকতে চাই।

কিন্তু গিয়ে দেখি তারা আমার ওপর হামলা চালানোর আগে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে রেখেছে। দরজা খোলার চেষ্টা করার সময় সুমন আমাকে আরও কয়েকটি কোপ দেয়। পরে বাবা ঘর থেকে বের হলে সুমন ও নাইম দৌড়ে পালিয়ে যায়।’ 

প্রতিবেশী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘তখন সাহরির সময়। ঘুম থেকে ওইটা আমি হাত মুখ ধুইতেছি। তখন চিৎকার শুনে তাদের বাড়িতে এসে দেখি মেয়েটার হাতে, পিটে ও বুকে কে যেন কুপিয়েছে। বাম হাত পুরোটা ঝুলে গেছিল। পরে আমরা সবাই মিলে তাকে হাসপাতালে পাঠাই।’ সুফিয়া বলেন, ‘আমরা কোনোদিন এই মেয়ে এবং সুমনকে এক সাথে দেখিনি। এছাড়া সুমনও মেয়েকে কোনো দিন বিরক্ত করেছে বলে দেখিনি।’ 

এ ঘটনার অভিযুক্ত সুমনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী তরুণীর বাড়ি থেকে আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে সুমনের বাড়ি। বাড়িতে ছোট একটি মাটির ঘর। সেখানেই মা–বাবা ও ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন তিনি। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।

সুমনের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরটিও তালাবন্ধ তার বাড়ির সামনে একটি কম্পিউটার ও ভ্যারাইটিজের দোকান আছে। সেই দোকানটিও বন্ধ। সুমন ও তাঁর পরিবারের লোকজন কোথায় গেছেন সে বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছে না।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে সুমনের বিরুদ্ধে এ ঘটনার বাইরে আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুমনকে ভালো এবং শান্ত ছেলে বলেই জানে সবাই। এ ঘটনায় দ্বিতীয় অভিযুক্ত নাইমের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মাকে পাওয়া গেলেও নাইমকে পাওয়া যায়নি। নাইমের বাবা ফেরদৌস মিয়া বলেন, ‘ছেলে ঘুম থেকে উঠে কোথায় যেন গেছে। তবে আমার ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তারা আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।’ 

এ বিষয়ে মাধবপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার পরই আমরা মামলাটি রেকর্ড করেছি। মামলায় আসামি করা হয়েছে ছয় জনকে। আমাদের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, ঘটনার সঙ্গে সুমন ও নাইম জড়িত। আমরা তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’

Back to top button