শিশুদের খেলার মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদকারী সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলের মুক্তির দাবিতে ঢাকার কলাবাগান থানার সামনে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও মানবাধিকার কর্মী ও উদীচী নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
পান্থপথের উল্টোদিকের গলির পাশে একটি খোলা জায়গা রয়েছে। এটি তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করে। পাশাপাশি মাঠটিতে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হয়।এই মাঠে কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত জানুয়ারি বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এর প্রতিবাদ করছেন স্থানীয়রা। মাঠটি রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী গত ৪ ফেব্রুয়ারি পান্থপথের কনকর্ড টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন করে। ‘কলাবাগান এলাকাবাসী’র ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে স্থানীয় শিশু-কিশোর ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন। এতে মানববন্ধনের সংগঠকদের অন্যতম ছিলেন সৈয়দা রত্না।
বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘হে পুলিশ আমার মা কই’, ‘পুলিশ আমার বোন কোথায়’, ‘পুলিশ আমার ভাই কোথায়’, ‘মাঠ দখল করে থানা চাই না’ ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। আজ রোববার রাত ১১টার সময়ও থানার সামনে তাদের বিক্ষোভ চলছিল।রাত ৯টার দিকে থানার সামনে থাকা উদীচীর সদস্য নাজিয়া নিগার বলেন, নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণেই সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে পুলিশ হয়রানি করছে।
রত্নার মেয়ে শেউঁতি শাহগুফতা বলেন, কলাবাগানের ওই মাঠটিতে ইট-সুরকি ফেলার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করায় সকাল ১১টার তাঁর মা সৈয়দা রত্না এবং ভাইকে ধরে নেওয়া হয়। তাঁর মা মাঠটি রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মাঠে গত রাতে ইট-সুরকি ফেলছিল পুলিশ। সকালে মা মাঠের সামনে গিয়ে ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। তখন তাঁকে আটক করা হয়। পরে আমার ভাই বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এলে তাঁকেও ধরে কলাবাগান থানায় নিয়ে যায়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,‘আমরা একটা অপরাধি সমাজ চাই না। তাই দেশের প্রতিটি এলাকায় শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ দরকার। মাঠের জায়গায় থানা করে অপরাধ কমানো যাবে না। বেশি করে মাঠ থাকলেই অপরাধ কমবে।’
তিনি বলেন, শিশুদের জন্য বিকল্প খেলার মাঠ না দেওয়া পর্যন্ত ওই স্থানে থানা বা অন্য কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হোক তা আমরা চাই না।’এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েক শিশুর কান ধরে ওঠবস করায় পুলিশ। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
সৈয়দা রত্না বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য। তাঁর ছেলে আইডিয়াল কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী। দুজনকে দিনভর থানায় আটকে রাখা হয়। তাঁদের আটকের খবর পেয়ে দুপুর ২টার দিকে ওই মাঠে যান মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নূরসহ কয়েক জন।