ঈদের বাকি এখনো প্রায় দশ দিন। এরই মধ্যে ঢাকা ছাড়তে শুরু করছে নগরবাসী। ঈদযাত্রায় সড়কের দুর্ভোগ ও যানজটের কথা চিন্তা করেই আগেভাগে পরিবার পরিজন দিয়ে গ্রামের পথে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে চাপ বেড়েছে ঘুরমুখো মানুষের।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এসব স্পটে যাত্রীর চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে অনেকেই বলছেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঈদ উদ্যাপন করতে পারেননি। এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাবে। রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা ও নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ঈদের আগের এক সপ্তাহে দীর্ঘ যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
ঈদ যাত্রার দূরপাল্লার বাসে অগ্রিম টিকিটের সংকট থাকলেও নিয়মিত যানবাহনের টিকিট মিলছে সহজেই। এতে আগেভাগে যাওয়া যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই যাতায়াত করতে পারছেন। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ গ্রামে যাবে। গার্মেন্ট-শিল্প-কারখানা ও সরকারি অফিসে এক সঙ্গে ছুটি হবে। এতে শেষ সপ্তাহে যাত্রীদের চাপও বাড়বে কয়েকগুণ। এ ছাড়া ঈদযাত্রায় মহাসড়কে দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে।
সড়কের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে আগেই গ্রামের পথে রওয়ানা দিচ্ছেন তারা। কেউবা পরিবারের সদস্যদেরকে ঈদের ছুটির আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। সরজমিন দেখা যায়, গত কয়েকদিনের তুলনায় চাপ বেড়েছে বাস টার্মিনালগুলোতে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফেরা মানুষেরা ভিড় করছেন এসব স্থানে। কেউ কেউ অগ্রিম টিকিটের জন্য ভিড় করছেন। যাত্রীর চাপ বাড়ায় কাউন্টারগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা।
ঢাকা থেকে বের হওয়ার অধিকাংশ সড়কে খানাখন্দ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কাঁচপুর সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে অনেকেই পরিবার পরিজনকে আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
বাড়িফেরা নাজমা নামের একযাত্রী বলেন, প্রতিবছর ঈদের ছুটি হলে বাড়ি যাই। আর সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকি। দুর্ভোগে পড়ি। ছেলে মেয়েদের কষ্ট হয়। কখনোই শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারিনি। শুনেছি এবছর ঈদের সময় আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। এতে সড়কে ভোগান্তি বাড়তে পারে। এমন দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এবার আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এখন কিছুটা শান্তিতে যেতে পারবো। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই ভোগান্তি বাড়বে।
ঈদকে কেন্দ্র করে ১৯শে রমজান থেকে যাত্রী চাপ বেড়েছে। স্ত্রী ও সন্তানকে বাসে উঠিয়ে দিতে সায়েদাবাদ টার্মিনালে এসেছেন একটি প্রাইভেট হাসপাতালের কর্মকর্তা মো. শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ৩০শে এপ্রিল বিকাল পর্যন্ত অফিস করতে হবে। ওই সময় বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ থাকবে।
বাসের অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরতে নানা অসুবিধা ও পথের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। নানা বিষয় চিন্তা করে আগেই সবাইকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ছুটি হলে আমি একা মানুষ কোনো না কোনো ভাবেই যেতে পারবো।
মহাখালী টার্মিনালে আগাম টিকিট নিতে আসা কয়েকজন যাত্রী বলেন, এখনো কোনো গার্মেন্টে ছুটি দেয়নি। ছুটি হলে চাপ বাড়বে। তাই আগেই বাসের অগ্রিম টিকিট নিতে এসেছি। তবে কোনো বাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, জামালপুরগামী কোনো বাসে টিকিট নেই। ঈদযাত্রার বাসের অগ্রিম টিকিট না পেয়ে নগরবাসী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চেও বেড়েছে যাত্রী চাপ। গতকাল সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চ ছিল পরিপূর্ণ। যাত্রী চাপ বাড়ায় কেবিনের পাশাপাশি ডেকেও জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই লঞ্চের সামনের অংশ ও কেবিনে যাতায়াতের পথে বিছানা করতে দেখা গেছে।
লঞ্চ স্টাফরা বলছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে যাত্রী বেড়েছে। তবে এখনো লঞ্চযাত্রায় যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই নিরাপদে যেতে পারছেন। ঈদ যতই নিকটে আসবে, যাত্রীচাপ ও ভোগান্তি তত বাড়বে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছুটির আগে গার্মেন্টে শ্রমিকদেরকে ধাপে ধাপে ছুটি দিলে ভোগান্তি কমে আসতে পারে।
রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে গতকাল দুপুরে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারে উপচে পড়া ভিড়। তবে ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। যাত্রীরা ঈদের ভোগান্তির শঙ্কায় নিয়মিত ট্রেনেই গ্রামে ফিরছেন। কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনের সিট ছিল যাত্রীদের দখলে। এ ছাড়া দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী যাতায়াত করতেও দেখা গেছে।
সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, ২৩শে এপ্রিল থেকে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। গত দুই বছরে ৪টি ঈদে নগরবাসীদের মধ্যে অনেকেই গ্রামে যায়নি। এবার কোনো বিধিনিষেধ নেই। ঈদের ছুটিও বেশি। এই সুযোগে অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ মানুষ বেশি যাতায়াত করবে। ফলে টিকিট সংকটে পড়বে মানুষ। প্রতিবছর টিকিটের জন্য গভীর রাত থেকে স্টেশনে অপেক্ষা করেও টিকিট মিলে না। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই আগাম ঢাকা ছাড়ছেন তারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, গত দুই বছর অনেকেই করোনার কারণে গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারেননি। এ বছর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক। সে কারণে মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকে এরই মধ্যে দুর্ভোগ এড়াতে ঈদের আগেই গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এতে ঈদের সময়ে কিছুটা হলেও দুর্ভোগ কমবে।