মাগুরায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ ব্যবহার করে অসদুপায় অবলম্বন ও এতে সহযোগিতার অভিযোগে শুক্রবার ছাত্রলীগ নেতাসহ ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।আটক ছয়জনের মধ্যে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহকারী একটি বড় চক্রের সদস্য রয়েছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
মাগুরা জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিভাইসটি ডেভিড কার্ডের আদলে তৈরি। ওই ডিভাইসের সঠিক নাম কী, তা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা জানতে পারেননি। এর কোনো ডিসপ্লে নেই। একটা সিমকার্ড আছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ডিভাইসটি অন করলে অপর প্রান্তের সঙ্গে সেটা সংযুক্ত হয়ে যায়। হেডফোনের মাধ্যমে অপর প্রান্ত থেকে দেওয়া বার্তা শুনতে পান ডিভাইস বহনকারী ব্যক্তি। তিনি বলেন, সারা দেশেই এ ধরনের চক্র সক্রিয় থাকতে পারে। যারা পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রশ্নের উত্তর এই ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেন। এই কাজে মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়ে থাকতে পারে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম ফয়সাল, শহরের ইসলামপুর পাড়ার বাসিন্দা ইফতেখারুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী তারানা আফরোজ, মহম্মদপুর উপজেলার বাসিন্দা ইসমত আরা ঝর্না, একই উপজেলার আমিনুল হাসান ওরফে সোহেল রানা এবং তাঁর বোন শাহানা বেগম। তাঁদের মধ্যে তারানা আফরোজ, ইসমত আরা ঝর্না ও আমিনুল হাসান পরীক্ষার্থী। অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে তাঁদের সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছে, ফাহিম ফয়সাল ঢাকার একটি চক্রের সহযোগী হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল ডিভাইস সংগ্রহ ও বণ্টনের দায়িত্বে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম জানিয়েছেন, মহম্মদপুর উপজেলায় রেলওয়েতে চাকরি করেন, এমন এক ব্যক্তির মাধ্যমে ডিভাইসগুলো পেয়েছিলেন তিনি। যেটা পাঁচজন পরীক্ষার্থীর কাছে দেন ফাহিম।
এ বিষয়ে আটক কারও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে আটক ব্যক্তিদের একজন ইসমত আরা ঝর্নার স্বামী নাইম ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে যায় ঝর্না। এরপর বাড়ি থেকে ওকে ধরে নিয়ে আসা হয়। ঝর্নার কাছে কোনো ডিভাইসও পাওয়া যায়নি।’
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে শহরের এজি একাডেমি বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশের সময় ডিজিটাল ডিভাইস, ব্লুটুথ হেডফোনসহ তারানা আফরোজ নামের এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই পরীক্ষার্থী জানান, তাঁর স্বামী ইফতেখারুল ইসলামের কাছ থেকে তিনি ওই ডিভাইস পেয়েছেন।
এরপর ইফতেখারুল ইসলামকে আটক করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইফতেখারুল ইসলাম জানান, আট লাখ টাকার চুক্তিতে ছাত্রলীগ নেতা ফাহিম ফয়সালের কাছ থেকে ওই ডিভাইস পেয়ে স্ত্রীকে দিয়েছেন তিনি। এরপর ফাহিম ফয়সালকে আটকের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি তিনজনকে আটক করা হয়।
মাগুরার জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এক পরীক্ষার্থী ডিজিটাল ডিভাইসসহ আটক হন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এর সঙ্গে আরও মানুষের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্তের স্বার্থে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইন অনুসারে নিয়মিত মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী থানায় মামলা হবে।
জানতে চাইলে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।