অপরাধএক্সক্লুসিভবাংলাদেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরাজশাহী

চর্ম ও যৌন সমস্যার টেলিমেডিসিন চিকিৎসার নামে প্রতারণা, দম্পতি আটক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সুন্দরী নারীদের ছবি ব্যবহার করে চর্ম ও যৌন সমস্যার টেলিমেডিসিন চিকিৎসার কথা বলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিত একটি চক্র। গত দুই বছরে চক্রটি হাজার হাজার রোগীদের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন চিকিৎসার ফাঁদে ফেলে অপচিকিৎসার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তাঁরা জনপ্রিয় চিকিৎসকদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দিত।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, আবু সাঈদ (৩১) জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান EW VILLA MEDICA এর চিফ লিগ্যাল অফিসার। এই প্রতিষ্ঠান এসথেটিক এবং রিজেনারেটিভ বিষয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়।

তিনি সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজ পর্যালোচনা করে দেখতে পান, ফেসবুক আইডিতে EW VILLA MEDICA প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ডা. তাসনিম খানের নাম-পদবি এবং মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে চিকিৎসার নামে ভুয়া প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় আবু সাঈদ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে এই চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ।

এসব অভিযোগে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—মো. রাশেদ হোসেন প্রান্ত (২৭) ও তাঁর স্ত্রী মোসাম্মত মৌসুমী খাতুন (২৩)।

এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন,৪টি মোবাইল সিম, ১৩টি ফেসবুক আইডি ও ৩টি হোয়াটসঅ্যাপ আইডি জব্দ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, চর্ম ও যৌন সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের কাছে পরামর্শ নিতে সংকোচবোধ করেন। এ ধরনের রোগীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারক চক্রের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে টেলিমেডিসিন সেবা নেয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা দেশের খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় চিকিৎসকদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দিত। গ্রেপ্তারকৃতরা কখনো চিকিৎসক কখনো চিকিৎসকের সহকারী পরিচয় দিয়ে কণ্ঠ পরিবর্তন করে রোগীদের সঙ্গে কথা বলতেন।

কথা বলার পর রোগীদের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন সেবার বিনিময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতেন। সরাসরি রোগী দেখালে ২ হাজার টাকা ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দেখালে তাঁরা ১ হাজার টাকা নিতেন। এভাবে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী দেখতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার আগে কোনো সন্দেহ মনে হলে, আমাদের জানাতে পারেন। অথবা অনলাইনে সেবা নেওয়ার চাইতে সরাসরি গিয়ে অথবা পরিচিত চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া ভালো। ভুয়া এসব চিকিৎসকদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরও বেশি নজরদারি করা প্রয়োজন।’ 

গ্রেপ্তারকৃতরা জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা. তাসনিম খান, ডা. হুমাইরা হিমি, ডা. মার্জিয়া সুষমা, ডা. আরশিয়া আহি, ডা. সানজিদা ইসলাম, ডা. নাফিসা তাসনীম ও ডা. আলভি রহমানের নাম-পদবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে। এরপর যৌন, চর্মসহ একাধিক রোগের বিষয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে ফেসবুক মেসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের মাধ্যমে অসুস্থ মানুষের সেবার নামে ভুয়া প্রেসক্রিপশন দিয়ে বিকাশ/নগদ/রকেটের মাধ্যমে কৌশলে রোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ ছাড়া বিভিন্ন নারীদের ছবি সংগ্রহ করে এডিটিং করে আপত্তিকর ছবি তৈরির পর মেসেঞ্জার ও একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে কৌশলে রোগীসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাঁরা মোবাইল ফোন, ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রেসক্রিপশন প্রদান ও ওষুধ বিক্রি করে। 

Back to top button