ঈদ যাত্রায় এ বছর ঢাকা নদী বন্দরের সদরঘাট টার্মিনালে অস্বাভাবিক চাপ পড়বে। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরসহ এ তিন জেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ নৌপথে উপকূলীয় জেলাগুলোতে যাবে।
কিন্তু মাত্র ১২ দিনে একমুখী এত যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নৌযান নেই। ফলে লঞ্চের ডেকে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি ছাদেও যাত্রী বহন করা হবে এবং এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাবে।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিআইডাব্লিউটিএ গত ২১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে ছয়টি নৌপথের ৭০টি ছোট লঞ্চ চলাচল স্থগিত রেখেছে। তাই এবার ঈদে ৫০ লাখ ঘরমুখী নৌ যাত্রীর একমাত্র মাধ্যম ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল।
বিলাসবহুল ও বড় আয়তনের লঞ্চ চলাচলের জন্য ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপকূলের বৈধ নৌপথের সংখ্যা ৪২টি হলেও যাত্রী স্বল্পতা ও নাব্যতা সংকটের কারণে মাত্র ৩৩টি নৌপথ ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ৮০-৮৫টি লঞ্চ এসব নৌপথ দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়।
জাতীয় কমিটির ঈদপূর্ব এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি ঈদে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের চারটি সিটি করপোরেশনসহ এ তিন জেলা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্বজনদের কাছে যায়। তাদের ২৫ শতাংশ যায় নৌপথে।আর সড়ক ও রেলপথে যায় যথাক্রমে ৫৫ ও ২০ শতাংশ।
এই হিসাব মতে, ৩৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ যায় লঞ্চসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযানে। তবে নিয়মিত দুর্ঘটনা, দূরপাল্লার সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বেহাল দশা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের প্রধান দুটি পথ শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি স্বল্পতা এবং নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই সড়কপথ এড়ানোর চেষ্টা করবে। এর বিপরীতে নৌপথে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫০ লাখ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নদ-নদী, নৌপরিবহন ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা বেসরকারি সংগঠনটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২৯ এপ্রিল থেকে ঈদের দাপ্তরিক ছুটি শুরু হলেও ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের দিন থেকেই মূলত ঈদ যাত্রা শুরু হবে।
তাই ওই দিন থেকে ২ মে পর্যন্ত ১২ দিনে ৫০ লাখ যাত্রী সুশৃঙ্খলভাবে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা নৌ খাতে নেই। তবে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতির কারণে সব বাধা উপেক্ষা করেই স্বজনদের সান্নিধ্যপ্রত্যাশীরা ছুটে যাবে। এতে টার্মিনালে যেমন মারাত্মক অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হবে, তেমনি লঞ্চের ছাদসহ ডেকে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হবে।