তবে কি শুরু হলো কোভিডের চতুর্থ ঢেউ? প্রশ্নটা উঠে গেছে সংক্রমণের হার এক দিনে ৯০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায়। কিছুদিন ধরে কমতে কমতে ভারতে দৈনিক সংক্রমণ যখন এক হাজারের নিচে চলে এসেছিল, তখনই মাথাচাড়া দিয়েছে চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা।
গতকাল রোববার ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ১৮৩, যা আগের দিনের তুলনায় ৯০ শতাংশ বেশি। সংক্রমণের পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যু সংখ্যাও। এক দিনে মারা গেছেন ২১৪ জন। উদ্বেগ ছড়াচ্ছে দিল্লিকে নিয়ে। রাজধানী রাজ্যে রোববার সংক্রমিত হয়েছেন ৫১৭ জন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র সোমবার বলেছে, সরকার পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছে। দিল্লি সরকারের এক সূত্র অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ে মাস্ক পরা ফের বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। প্রকাশ্যে ধরা পড়লে জরিমানা ফের চালু হতে পারে। নীতি আয়োগ সূত্রের খবর, হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
সংক্রমণের ঢেউ লেগেছে ক্রিকেটেও। এই মুহূর্তে আইপিএল টুর্নামেন্ট চলছে ভারতে। মুম্বাইয়ের স্টেডিয়ামে দর্শকেরাও আসছেন। দিল্লি ক্যাপিটালসের ফিজিও প্যাট্রিক ফারহার্ট সংক্রমিত হয়েছেন বলে টিম সূত্র জানিয়েছে। নতুন করে সংক্রমণ ছড়ানোর মধ্যেই তিন দিনের সফরে ভারতে এসেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। মঙ্গলবার তিনি গুজরাটের জামনগরে ‘হু গ্লোবাল সেন্টার ফর ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন’–এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সংক্রমণের ধাঁচ কী রকম, গতি–প্রকৃতি কেমন, তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই সূত্রের কথায়, সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সব মহলেই একটা স্বস্তির ছাপ পড়েছিল। একটু ঢিলেঢালা মনোভাব চলে এসেছিল। কোভিড পরীক্ষাও কম হচ্ছিল। এখন পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুনভাবে ভাবতে হবে।
সংক্রমণ সেই সময় বাড়তে শুরু করল, যখন দেশের প্রায় সব রাজ্যে কোভিড–সংক্রান্ত নিয়মবিধি শিথিল করে দেওয়া হয়েছে এবং সব ধরনের কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। স্কুল, কলেজ সব খুলে গেছে। অফিসে অফিসে শুরু হয়েছে স্বাভাবিক হাজিরা। বাড়ি থেকে কাজ করার অভ্যাস বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যও গতি পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, কোভিডের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত সবকিছুতে প্রাণ ফিরে আসছে। শুরু হয়েছে সব বিদেশি বিমানের উড়ান। পর্যটক ভিসা দেওয়াও শুরু হয়েছে। এই সময়ে নতুন করে কোভিডের সংক্রমণের মোকাবিলা কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে সরকার এখনো কিছু ভেবে ওঠেনি।
ভারতের দিল্লিতে সংক্রমণ বাড়ায় উত্তর প্রদেশ সরকার সাবধানী হয়েছে। রাজ্য সরকার রাজধানী লক্ষ্ণৌ ছাড়াও দিল্লির কাছাকাছি জেলাগুলোতে নতুন করে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। নতুন আদেশে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে বেরোতে হলে সবাইকে মাস্ক পরতেই হবে।এই জেলাগুলো হলো গৌতম বুদ্ধ নগর, গাজিয়াবাদ, হাপুর, মীরাট, বুলন্দশহর ও বাগপত। দিল্লির লাগোয়া গৌতম বুদ্ধ নগরে (নয়ডা) গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ জন নতুনভাবে সংক্রমিত হয়েছেন। গাজিয়াবাদে ২০ জন। লক্ষ্ণৌয়ে ১০ জন।