অনলাইন পেজে দুটি শাড়ির অর্ডার করেছিলেন রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা আবদুল আজিজ। কুরিয়ার সার্ভিস এস এ পরিবহনে টাকা জমা দিয়ে পণ্য নিয়ে আসেন তিনি। বাসায় এসে দেখেন দুটি শাড়িই পুরোনো ও ছেঁড়া। পরে ওই ই-কর্মাস পেজের দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করেও টাকা ফেরত পাননি আবদুল আজিজ।
আবদুল আজিজ সাহেব দুটি অনলাইন পেজ থেকে এ রকম প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) বলছে, এগুলো একই চক্রের। ফেসবুকে নীলাচল অনলাইন শপিং, ওমেন বাজার ডটকম, ডেইলি শপিং, সামার কালেকশন ডটকম, নিউ কালেকশন—এ রকম ২১টি নামে পেজ খুলে ছয় বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। গ্রাহকদের থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার পণ্যের ফরমাশ নিয়ে পুরোনো, ছেঁড়া, নিম্নমানের শাড়ি, লেহেঙ্গা ও থ্রি-পিস সরবরাহ করতেন চক্রের সদস্যরা।
আবদুল আজিজের মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন মোহাম্মদ আইয়ুব। তিনি দুই মেয়ের জন্য অনলাইনে দুটি শাড়ির অর্ডার করেছিলেন। আজ সোমবার তিনি বলেন, ‘টাকা নিয়ে তারা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নতুন শাড়ি না পাঠিয়ে পুরোনো শাড়ি পাঠিয়েছে। পরে তারা ওই পেজটিও বন্ধ করে দিয়েছে।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রোববার রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে ই-কর্মাসের নামে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন বাপ্পি হাসান (২৪), আরিফুল (১৯), সোহাগ হোসেন (২২), বিপ্লব শেখ (২৫) ও নুর মোহাম্মদ (২৮)। তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পুরোনো কাপড় ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন,‘জড়িত ব্যক্তিদের নাম পেয়েছি। তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ই-কর্মাসের নামে প্রতারণা বন্ধে ডিবি কাজ করবে। তবে পুলিশের একার পক্ষে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয়।
আজ সংবাদ সম্মেলনে রাজীব আল মাসুদ বলেন, গ্রাহকদের থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার পণ্যের ফরমাশ নিয়ে নিম্নমানের শাড়ি, লেহেঙ্গা ও থ্রি-পিচ সরবরাহ করতেন চক্রের সদস্যরা। তাঁরা বাসাবাড়ি থেকে পুরোনো কাপড় অল্প দামে কিনে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতেন।
তিনি বলেন, নতুন নতুন ফেসবুক পেজ খুলে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করতেন চক্রের সদস্যরা। পেজে আকর্ষণীয় পণ্যের ছবি দিয়ে অর্ডার নিতেন। পরে এস এ পরিবহনের মাধ্যমে ছেঁড়া ও পুরোনো কাপড় গ্রাহকদের জন্য পাঠাতেন। এই চক্রকে সহায়তা করতেন এস এ পরিবহনের কয়েকজন কর্মকর্তা–কর্মচারী। তাঁরা জেনেশুনে প্রতিটি পার্সেলের জন্য ৫০ টাকা করে নিয়ে প্রতারকদের সহায়তা করতেন।
ডিবি জানায়, এ ধরনের পেজ থেকে সাধারণ দুই থেকে চার হাজার টাকার কেনাকাটা করেন গ্রাহক। তাই প্রতারণার শিকার হয়েও ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন না। আর এ সুযোগই কাজে লাগান চক্রের সদস্যরা। ডিবি আরও জানায়, জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিএমপি হাজারীবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।