অপরাধএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরাজধানী

মোবাইল গেম খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে কদমতলীতে কলেজছাত্র খুন

মোবাইল গেম খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে রাজধানীর কদমতলীতে কলেজছাত্র রাকিবুল ইসলাম (১৯) খুন হন। রাকিবুলকে হত্যার দায় স্বীকার করে গতকাল রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দুই ভাই—রবীন (২৪) ও রাসেল (২০)।

রাকিবুলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর বাবা আবদুল আলী বাদী হয়ে কদমতলী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।মামলার নথিপত্র ও তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাকিবুল তাঁর মা-বাবার সঙ্গে কদমতলীর পাটেরবাগ এলাকায় থাকতেন। ঘটনার দিন বেলা তিনটার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন।

তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজহারুল ইসলাম।রাকিবুল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। চার দিন আগে ১৪ এপ্রিল কদমতলীর মিনাবাগ এলাকার ময়লার ভাগাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

রাকিবুল ইফতারের সময়ও বাসায় না ফেরায় তাঁর স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এ সময় তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।রাকিবুলকে খুঁজে না পাওয়ার কথা পুলিশকে জানায় পরিবার। দিবাগত রাত দুইটার দিকে কদমতলীর মিনাবাগের ময়লার ভাগাড় থেকে রাকিবুলের লাশ উদ্ধার হয়।

তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ রাকিবুলের মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) সংগ্রহ করে।সিডিআরের তথ্যে, রাকিবুলের সঙ্গে কদমতলীর রবীনের মুঠোফোনে কথা বলার তথ্য পায় পুলিশ।ততক্ষণে রবীন ঢাকা ছেড়ে চলে যান শরীয়তপুরে। পরে রবীনের ছোট ভাই রাসেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রাসেল স্বীকার করেন, তাঁর ভাই রবীন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, রবীন ও রাসেলের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর। তাঁরা ঢাকার কদমতলী এলাকায় থাকেন। রবীন ডিশ লাইনের কাজ করেন।রবীন ও রাসেল গতকাল দুপুরে ঢাকার সিএমএম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার এসআই আজহারুল বলেন, রাসেল যখন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন, তখন তাঁর ভাই রবীন শরীয়তপুরে অবস্থান করছিলেন। পরে অভিযান চালিয়ে রবীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে কদমতলী থানায় আনা হয়। দুই ভাইকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে রবীন ও রাসেল এ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। কারণসহ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন।

ঢাকার সিএমএম আদালত ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদালতে দুই ভাইয়ের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অনুযায়ী, রাকিবুল ও রবীন পূর্বপরিচিত। একই বয়সী না হলেও তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। দুজনেই মুঠোফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলতেন। একপর্যায়ে রবীন ফ্রি ফায়ার গেম খেলার যে পাসওয়ার্ড, সেটি বিক্রি করতে রাকিবুলকে অনুরোধ করেন। কিন্তু রাকিবুল তা না করে নিজেই ওই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কয়েক দিন ধরে গেম খেলে আসছিলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ হয়।

ইফতারের আগমুহূর্তে রাকিবুলকে খুন করা হয়। হত্যার পর তাঁর লাশ বাসার ওয়ার্ডরোবে ভরে রাখেন রবীন। গভীর রাতে রাসেলের সহযোগিতায় রাকিবুলের লাশ ওয়ার্ডরোব থেকে বের করে মিনাবাগের ময়লার ভাগাড়ে ফেলেন রবীন।

১৪ এপ্রিল কৌশলে রাকিবুলকে নিজের বাসায় ডেকে নেন রবীন। তখন বাসায় অন্য কেউ ছিল না। ফ্রি ফায়ার গেম বিষয়ে প্রথমে রাকিবুল ও রবীনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ডিশ লাইনের কাজে ব্যবহৃত তার দিয়ে রাকিবুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রবীন।

রাকিবুলের বাবা আবদুল আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওরা খুন করেছে। এখন আমরা শুনছি, মোবাইলে গেম খেলাকে কেন্দ্র করে রবীন এই খুন করেছে। আমরা রবীন ও রাসেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

Back to top button