নববর্ষের দিন কিশোর প্রেমিক যুগলের ভিডিও ধারণ এবং তাদের হেনস্তা করার অভিযোগে কুমিল্লা ডিবি (গোয়েন্দা বিভাগ) পুলিশের দুই সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের বরখাস্ত করা হয় বলে শুক্রবার নিশ্চিত করেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া দুই ডিবি সদস্য হলেন নজরুল ইসলাম ও রোমান হাবিব ওরফে রবিন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লাল শাড়ি আর লাল পাঞ্জাবি পরা ওই যুগলকে দেখে দূর থেকে মুঠোফোনে ভিডিও করতে থাকেন ডিবি পুলিশের এক সদস্য। পেছন থেকে ভিডিও করতে করতে তাদের সামনে গিয়ে পরিচয় জানতে চান তিনি। তাদের দাঁড় করিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন ওই সদস্য। সঙ্গে থাকা ডিবির আরেক সদস্য কিশোরীকে মাস্ক খোলার জন্য বলতে গিয়ে তাকে ‘তুই’ করে সম্বোধন করেন। ওই কিশোরকে বলেন, ‘মুড়ায়া ছাটনা ছিরালামু একবারে।’
পয়লা বৈশাখের দিন কুমিল্লা নগরের ধর্মপুর এলাকার একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও নবম শ্রেণির এক ছাত্রী কুমিল্লা ধর্মসাগরপাড় নগর পার্কে বসে গল্প করছিল। জেলা ডিবি কার্যালয়ের পাশেই পার্কটির অবস্থান। প্রতিদিন সেখানে শত শত মানুষ জড়ো হয়। নববর্ষের উৎসবে আরও অনেকের মতো ওই যুগল পাশাপাশি বসে আড্ডা দিচ্ছিল।
ডিবি সদস্যরা ঐ সময় মেয়েটির বাবার মুঠোফোন নম্বর চাইলে তারা ভয়ে মাফ চাইতে থাকে এবং মেয়েটির বাবা বিদেশ থাকেন বলে জানায় ছেলেটি। তখন পাশ থেকে অপর ডিবি সদস্য বলেন, ‘বিদেশ থেকে (কিশোরীর বাবা) আইব এখন, নইলে অফিসে নিয়া যামু। অফিস থেকে অভিভাবক আইসা নিয়া যাবে।’
ভিডিওটিতে ছেলেটিকে কয়েকবার মাফ চাইতে দেখা যায়। কিন্তু কর্ণপাত করেননি পুলিশ সদস্যরা। ১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর মধ্যেই দুই ডিবি সদস্যকে বরখাস্ত করার খবর এল।
ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি। বিষয়টি আমাকে কয়েকজন মৌখিকভাবেও জানিয়েছেন। বিষয়টি নজরে আসার পর ওই দুই পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়। রাতে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অভিযোগ ওঠা দুই ডিবি সদস্যের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি নাজমুল আলম চৌধুরী বলেন, যেখানে পুলিশ ভিডিও ভাইরাল হলে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে, সেখানে পুলিশের ভিডিও করা ঠিক হয়নি। তাঁদের আইনের আওতায় আনা হোক। এ ভিডিও কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল, তা–ও খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঘটনায় যদি ওই কিশোর–কিশোরী কেউ আত্মঘাতী কোনো সিদ্ধান্ত নিত, সে ক্ষেত্রে এর দায়ভার কে নিত?