ভয়াবহ ঋণ সমস্যার জর্জরিত হয়ে দিশেহারা অবস্থা দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার। বর্তমানে দেশটির ঘাড়ে ঋণের দায় ৫ হাজার কোটির মার্কিন ডলারের বেশি। এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দিয়েছে দেশটিতে। ফলে অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধ আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
শ্রীলংকার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। দেশটিতে খাদ্য ও জ্বালানির সংকট কী পরিমাণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তা উঠে এসেছে বিবিসির এক পডকাস্টে।শ্রীলংকার খাদ্য সংকট নিয়ে বিবিসি কথা বলেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারীর সঙ্গে। গত তিন মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে বলে জানান এই নারী।
জ্বালানির অভাবে জেনারেটর চালু রেখেও প্রাতিষ্ঠানিক কাজ চালানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কলম্বোভিত্তিক আইটি কোম্পানি সায়েন্টেটেকনোলজিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজীব রানা। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত আছেন দেড়শতাধিক মানুষ। রাজীব বলেন, আমরা সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি তা হলো জ্বালানির অভাব।
জেনারেটর চালানোর জন্য অপরিহার্য উপাদান জ্বালানি। সকালে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ ছিল না। বিকাল ৫টার দিকে হয়তো আবার বিদ্যুৎ চলে যাবে। জ্বালানির দাম দ্বিগুনের বেশি হয়ে যাওয়ায় জ্বালানির অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে জেনারেটর চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। স্টেশনগুলোতেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী বলেন,বাড়িতে খাবার দাবার যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। স্থানীয় দোকানে গিয়ে শাক সবজির দাম দেখছিলাম, গত তিন মাসেই সব খাদ্যদ্রব্যের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বেশির ভাগ জিনিস তো এখন আর পাওয়াই যায় না।
গুঁড়া দুধ কিনতে গিয়ে দেখি, দোকানে মাত্র কয়েকটা প্যাকেট রয়েছে। ৪০০ গ্রামের এক প্যাকেট দুধ তারা সাড়ে আটশ রুপিতে বিক্রি করছে। তিন মাস আগে ৪০০ গ্রাম গুঁড়ো দুধের দাম ছিল ৪৮০ রুপি। আর এখন তো গুঁড়া দুধ বলতে গেলে পাওয়াই যায় না।
তিনি আরো বলেন, ডালের মতো সাধারণ খাদ্যপণ্য যা আমরা প্রতিদিন ভাতের সাথে খাই, এর দাম হয়ে গেছে ৪৭৫ রুপি, এর দাম আগে ছিল ২৬০ রুপি। রান্নার অন্যান্য উপাদানের দামও প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। আজ সকালে ১২০ রুপি দিয়ে পাউরুটি কিনেছি, ৩ মাস আগে এর দাম ছিল ৬০ রুপি। বড় বড় মুদি দোকানে এ পাউরুটি ২২৫ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।
সারা দেশের অবস্থাই এখন এরকম বলে জানান এই নারী। তিনি বলেন, বেশির ভাগ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে আন্দোলন করার জন্য, আমি নিজেও গতকাল আন্দোলনে ছিলাম। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে অবিরামভাবে সবাই আন্দোলন করছে। বিক্ষোভকারীদের চেহারায় আপনি ক্ষোভ দেখতে পাবেন। মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য অপ্রতুলতার জন্য ঠিকমতো খাবার যোগাতে পারছে না তারা।
এই নারীর মতো পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলংকার বেশির ভাগ জনমানুষ। মূল্যস্ফীতি এবং জ্বালানি সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশটির ব্যবসায়ীদের ওপরও। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেশটিতে নৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার জনগণ। এসব সমস্যার প্রধান কারণ দেশটির প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ইত্যাদি অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানি করতে গিয়ে ফুরিয়ে এসেছে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
এদিকে যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা না থাকলেও পরিশোধ করতে হচ্ছে বিদেশি ঋণের সুদ। এই সুদের খরচ যোগাড় করতে জ্বালানির খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে দেশটির সরকার। যার কারণে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না দেশটি। ফলে দেশটিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট।