অপরাধএক্সক্লুসিভনারায়ণগঞ্জবাংলাদেশশিক্ষাঙ্গন

শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ায় দোষীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল নারায়ণগঞ্জের স্কুল

ম্যানেজিং কমিটির দুই অভিভাবক সদস্যের হাতে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে সোমবার উত্তাল হয়ে উঠেছিল স্কুল প্রাঙ্গণ। এদিন স্কুলের শিক্ষকরা কর্মবিরতি এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে স্কুল মাঠে বিক্ষোভ করে।

গত রোববার দুপুরে স্কুল ছুটির সময় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দুই অভিভাবক সদস্য মহানগর বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সরকার আলম ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওয়াজেদ আলী খোকনের ছোট ভাই ওয়াহেদ সাদত বাবু স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানকে স্কুল মাঠে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে।

শুধু তাই নয়, পরে স্কুলের শিক্ষকদের কক্ষে গিয়ে ওই শিক্ষককে দাড়ি ও পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলার এবং হাত কেটে নেয়ার হুমকি দেয় প্রকাশ্যে। এ দুই অভিভাবক সদস্যসহ ম্যানেজিং কমিটির ৩ সদস্যের স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি বাণিজ্যে বাধা দেয়ার কারণেই শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগী শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, অভিভাবক ও অন্য শিক্ষকরা জানিয়েছেন।

ওই ঘটনায় সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ঘটনার শিকার শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই ঘটনা জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে স্কুলশিক্ষকরা জানিয়েছেন। তবে সোমবার ঘটনার জন্য দায়ী ২ অভিভাবক সদস্যকে স্কুলে দেখা যায়নি। অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রোষানলের ভয়ে তারা স্কুলে যায়নি।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষক লাঞ্ছনাকারী দুই অভিভাবক সদস্যকে সন্ত্রাসী ও কুলাঙ্গার আখ্যা দিয়ে কমিটি থেকে তাদের বহিষ্কারের জন্য কমিটির সভাপতিকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি দেয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চন্দন শীল, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহামুদুল হাসান ভূঁইয়া, লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান, ছাত্র প্রতিনিধি মো. সাজেদীন ও তাহিয়াতুল আহমেদ স্নেহ। এ ছাড়া স্কুলের অন্য শিক্ষকরা বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেন।  

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে স্কুল মাঠে জড়ো হয়। কর্মবিরতি দিয়ে শিক্ষকরাও ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চন্দন শীল, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহামুদুল হাসান ভূঁইয়া, লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান, ছাত্র প্রতিনিধি মো. সাজেদীন ও তাহিয়াতুল আহমেদ স্নেহ। এ ছাড়া স্কুলের অন্য শিক্ষকরা বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেন।  

স্কুলের প্রধান মাহামুদুল হাসান বলেন, আইনগত ভাবে আমরা বিষয়টিকে মোকাবিলা করবো। বিধি মোতাবেক এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চন্দন শীল বলেন, এভাবে শিক্ষকদের অবমাননা কোনো ভাবেই বরদাশত করা হবে না।

বিষয়টি স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হবে। ঘটনাটিকে আইনগত ভাবে মোকাবিলার ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা যা কিছু করবো স্কুলের স্বার্থ ও ঐতিহ্য রক্ষায় করবো। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করবো।

শিক্ষক নির্যাতনকারীদের কোনো ভাবেই ছাড় না দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান বলেন, হাই স্কুলের একজন শিক্ষক তার ওপর হামলা হয়েছে জানিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র প্রতিনিধি মো. সাজেদীন ও তাহিয়াতুল আহমেদ স্নেহ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার জন্য দায়ী দুই অভিভাবক সদস্য সরকার আলম ও ওয়াহেদ সাদত বাবুকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তাদের ম্যানেজিং কমিটি থেকে বহিষ্কার করতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।

অন্যথায় তারা দাবি আদায়ে রাস্তায় নামার হুমকি দেন। ওই সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়, ‘বাবু-আলম বহিষ্কার, হাই স্কুল পরিষ্কার’।ভুক্তভোগী শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান তার বক্তব্যে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান। তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শান্ত থেকে ক্লাসে ফিরে যাবার আহ্বান জানান। 

Back to top button