অপরাধএক্সক্লুসিভবাংলাদেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসাভার

পঞ্চম শ্রেণী পাস হ্যাকারকে গ্রেপ্তার করল ডিবি

রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার বাসিন্দা লিটন ইসলাম। টেনেটুনে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছিলেন তিনি। পুলিশের খাতায় এখন তার পরিচয় হ্যাকার হিসেবে। এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাকের মামলায় গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এই লিটন একাই হ্যাক করেছেন অন্তত আড়াই হাজার ফেসবুক আইডি!

রাজধানীর কদমতলী থানার এক মামলায় গত রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে নানা ডিভাইস জব্দ করে তা যাচাই করে সাইবার গোয়েন্দারা দেখতে পান, অন্তত আড়াই হাজার আইডির ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড তার দখলে। এ তালিকায় অনেক ভিআইপি ও শিল্পপতিদের অ্যাকাউন্টও রয়েছে। রয়েছে বিদেশি নাগরিকদের আইডিও।

এমনকি আইডিধারী ব্যক্তিদের জিম্মি করে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। টাকা না দিলে দখলে থাকা আইডি থেকে রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে জঙ্গি পরিচয় দেওয়ার ভয়ও দেখাতেন এই লিটন। ব্যক্তিগত গোপন ছবি ছড়ানোর হুমকিও ছিল তার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার হাতিয়ার।

লিটনকে গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ইনভেস্টিগেশন টিমের প্রধান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল হক বলেন, লিটন প্রথমে অনলাইনে ফিশিং লিংক তৈরি করে ছবি ও ভিডিও যুক্ত করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতেন।

শেয়ার করা লিংকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করা মাত্রই ওই পাসওয়ার্ড ও ইউজার নেম হ্যাকার লিটনের কাছে চলে যেত। এই হ্যাকার তখন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে অ্যাকাউন্টটি দ্রুত তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতেন।সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লিটন জানিয়েছেন, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। এরপর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে সাইবারে বিশেষজ্ঞ হয়ে যান। কিন্তু তার এই জ্ঞান ভালো কাজে ব্যবহৃত হয়নি।

সাইবার পুলিশের নাজমুল হক বলেন, লিটন পরে টার্গেট ব্যক্তিকে মেসেঞ্জারে বার্তা দিয়ে হ্যাকিংয়ের বিষয়ে অবগত করে টাকা দাবি করতেন। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেবেন বলে হুমকি দিতেন। আইডিতে রাষ্ট্রবিরোধী ও ধর্মীয় বিতর্ক সৃষ্টি করে জঙ্গি পরিচয় ছড়ানোরও হুমকি দিতেন তিনি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, লিটন সর্বনিম্ম ১০ হাজার টাকা দাবি করতেন। তার কাছ থেকে ১০টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে; এগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট যাচাই করে মোট কত টাকা হাতিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এছাড়া তাকে সোমবার আদালতে হাজির করে একদিনের রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে।

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর এবং সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, লিটন চাঁদাবাজির জন্যই আইডি হ্যাক করতেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, আমেরিকা-ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আইডি হ্যাক করে অর্থ হাতিয়েছেন তিনি।

মেয়েদের আইডি হ্যাক করে মেসেঞ্জার থেকে গোপন তথ্য নিয়ে জিম্মি করে টাকা হাতিয়েছেন। এই লিটনের খপ্পরে পড়ে নাকানি-চুবানি খেয়েছেন অনেক ভিআইপি ও শিল্পপতিও। তাকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য মিললেও তারা কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে আগে থেকে পুলিশের সহায়তা নেননি।

Back to top button