বুধবার রাত সাড়ে ৯টা। কাওরানবাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়। গাড়ি ছুটছে বাংলামোটরের দিকে। এর মাঝে কিছু তরুণ খুব ব্যস্ত। তাদের সবার নজর যাত্রীবাহী বাসের দিকে। বাসের জানালার পাশে থাকা যাত্রীর কান থেকে মুহূর্তেই লাফ দিয়ে ছিনিয়ে নিচ্ছে মোবাইলফোন।
ভুক্তভোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক রাস্তা থেকে চলে যাচ্ছে আরেক রাস্তায়। প্রশাসন, উপস্থিত শতশত লোকের মাঝে ফোন ছিনতায়ের এমন ঘটনা দেখেও যেন গায়ে মাখছে না কেউ।এমনই এক ভুক্তভোগী রাসেল আহমেদ।
গুলিস্তান যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফার্মগেট থেকে বাসে উঠেন তিনি। রাসেল বলেন, ‘কাওরানবাজারে জ্যামে বসেছিলাম। জ্যাম ছাড়তেই আমার ফোনে একটা কল আসে। জানলার পাশে বসে ফোনে কথা বলছিলাম। হটাৎ কে যেন বাসের জানালা দিয়ে ফোন টান দিয়ে নিয়ে গেল।
কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আমার পাশের লোকও অবাক। আমি চোর চোর বলে চিৎকার করলে বাস স্লো করে আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। বাস থেকে নেমে চোরের কোনো হোদিস পাইনি। কাকে ধরবো। কাকে বলবো।’
ফোন হারানোর পরও ছিনতাইকারীর পেছনে বেশ কিছুদূর ছুটেছেন তানভীর আহম্মেদ। দৌড়ায়েও হাতের নাগালে পায়নি কাউকে। তানভীর বলেন, ‘অফিস শেষ করে একুশে টিভির মোড় থেকে সবে বাসে উঠেছি। এমন সময় বাসা থেকে ফোন আসে।
কথা বলতে বলতে বাসের সিঁড়ি দিয়ে ভেতরে যাচ্ছি, এমন সময় পিছন থেকে ফোন নিয়ে ভোঁ দৌড়। বাস স্লো ছিল। আমিও নেমে ওর পেছনে চোর চোর বলে দৌড় দেই।কিন্তু চোরটা চলন্ত গাড়ির মধ্যদিয়েই রাস্তার এপাশ থেকে অন্যপাশে চলে গেল। তারপরও নজরে রেখেছিলাম। আমিও চেষ্টা করেছিলাম।
কিন্তু নিজের জীবনের মায়ায় আর রানিং গাড়ির সামনে পা বাড়াইনি। চেহারাটা না দেখলেও আমি ওকে ঠিকই চিনবো। আনুমানিক ১৪/১৫ বছর বয়স হবে। মাথার চুলগুলো ছোট ছোট। হলদে কালারের প্যান্ট আর ছাই কালারের একটা টিসার্ট পরা ছিল।’
ফোন ছিনতাইয়ে জিডির বিষয়ে তিনি বলেন, জিডি করে আর লাভ কি। এর আগে আমার ছোট ভাইয়ের ফোন হারিয়েছিল। তখন থানায় জিডি করেছিলাম। আজ পর্যন্ত তার হদিস পাইনি। তাই ভাবলাম জিডি করে আর লাভ নেই। শুধু শুধু ঝামেলায় জড়ানো।
সোহানুর রহমান শাহ্বাগ থেকে মিরপুর শেওড়াপাড়ায় বাসায় ফিরছিলেন। পথে কাওরানবাজার এলাকায় তার মোবাইল ফোনটা নিয়ে উধাও হয়ে যায় চোর। সোহান বলেন, ‘বাংলামোটর মোড়ের আগে থেকেই জ্যাম ছিল। জ্যাম ছাড়লেও গাড়িগুলো আস্তে আস্তে চলছিল।
আমি বাসের জানালার পাসে বসে ফোন ঘাটছিলাম। সবে কাওরানবাজারের সিগন্যালটা ছেড়েছে। মোড়টা ক্রস করতেই ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে চলে গেল। আমি বাস থেকে নামারও সুযোগ পাইনি। আশেপাশের যাত্রীদের বললাম আমার ফোন নিয়ে চলে গেছে।
অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। কেউ কেউ বললেন, নেমে ট্রাফিক পুলিশকে বলেন। দেখেন ওরা কিছু করতে পারে কি না। বাস থেকে নামলাম। আসে পাশের পরিবেশ দেখে নিজের ওপরই খুব আফসোস হচ্ছিল। তাই কাউকে কিছু না বলে অন্য একটি বাসে উঠে বাসার উদ্দেশে রওনা দিলাম।’