হেডফোন, ইয়ারফোন বা ইয়ারবাড – এই প্রোডাক্টগুলো বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। তবে লম্বা সময় ধরে হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। লম্বা সময় ধরে ইয়ারফোন বা হেডফোন ব্যবহার করার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানা যাক।
আপনি যদি সারাদিন হেডফোন ব্যবহার করে থাকেন, তবে ব্যবহারের মাঝেমাঝে হেডফোন পরিস্কার করা কিন্তু অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। বেশিরভাগ মানুষ মাঝেমধ্যে বা ময়লা হয়ে গেলে তবেই তাদের হেডফোন বা ইয়ারফোন পরিস্কার করেন।
কিন্তু প্রতিদিন গেমিং বা জিম ওয়ার্কআউট এর জন্য ব্যবহ্রত হেডফোন বা ইয়ারফোন পরিস্কার করা ছাড়া কানে দেওয়া সৃষ্টি করতে পারে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। হেডফোন কানে দিয়ে ঘুমালে বা অন্য কারো সাথে একই হেডফোন শেয়ার করলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।
আপনি যদি আপনার হেডফোন বা ইয়ারফোন নিয়মিত ব্যবহার করেন, তবে নিয়মিত সেগুলো পরিস্কার করুন। এতে হেডফোন বা ইয়ারফোনের মাধ্যমে হতে পারে এমন ইনফেকশন থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়।
অধিকাংশ মানুষ এই বিষয়টি এড়িয়ে চললেও এটি কিন্তু সত্য যে ক্রমাগত হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহারে হ্রাস পেতে পারে শ্রবণশক্তি। আমরা যদি হেডফোন এর কার্যপ্রণালী বুঝি, তাহলেও ব্যাপারটি অনেকটা পরিস্কার হয়ে যাবে। মূলত হেডফোন থেকে নির্গত শব্দ তরঙ্গ আমাদের কানের পর্দাকে ভাইব্রেট করে। আর লম্বা সময় ধরে হাই ভলিউমে এই ব্যাপারটি ঘটলে হেয়ার সেল এর সেনসিটিভিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
সুইমার’স ইয়ার হচ্ছে এমন একটি ইনফেকশন যা কানে পানি আটকে গেলে হয়ে থাকে। এতে কানে ব্যাথা হয়। ইয়ার ক্যানেল বা কানের বাইরের অংশ অতিরিক্ত আর্দ্রতা বা ত্বকের আঘাত এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তবে এই ইনফেকশন ঘটে থাকে।
www.emedicinehealth.com এর তথ্যমতে কানের ক্যানেলে ব্যবহার হওয়া ইয়ারফোন বা ইয়ার এইড এর মত ডিভাইস বাড়িয়ে দিতে পারে সুইমার’স ইয়ার ইনফেকশনের সম্ভাবনা। কারণ এই ধরণের ডিভাইস ব্যবহারে কানের ক্যানেলের আদ্রতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে উষ্ণ আবহাওয়া ও অনুশীলনের সময় উল্লেখিত ডিভাইস ব্যবহারে এই ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে।
সারাদিন ইয়ারফোন পড়ে থাকার আরেকটি বিরক্তিকর সাইড এফেক্ট হলো এয়ার একনে বা পিম্পল। ইয়ারফোন ব্যবহারে কান ঘামার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। মূলত ইয়ারবাডের কারণে স্কিনের সাধারণ অবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দেয়।
ডিভাইস পরিস্কার রাখলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়, তবে এর মাধ্যমে পুরোপুরি সমস্যার সমাধান হয়না। ওপেন-ব্যাক ইয়ারবাডগুলোতে হাওয়া চলাচলের স্থান থাকলেও কানের ভিতর ও বাইরের অংশের সাথে অনবরত টাচে থাকায় সমস্যার সৃষ্টি করে। সুতরাং,লম্বা সময় ধরে ইয়ারফোন বা ইয়ারবাড ব্যবহারে ইয়ার একনে সৃষ্টি হতে পারে।
কানের খইল বা ইয়ারওয়্যাক্স (earwax) তৈরি হয়ে সঠিকভাবে বের হয়ে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। কিছু মানুষ এর কানে অন্যদের চেয়ে কম ইয়ারওয়্যাক্স তৈরী হয়। এই সংখ্যা আরো কমে যেতে পারে সারাদিন কানে ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলে।
অতিরিক্ত ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলে কানের খইল একস্থানে সংকুচিত হয়ে বাঁধার সৃষ্টি করে। কিন্তু কানের কার্যক্রম ঠিক রাখতে কানের খইল ঠিকমত তৈরি হওয়া ও তা নিয়মিত পরিস্কার করা জরুরি।এই প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে যদি কানে কোনো বাঁধা, অর্থাৎ ইয়ারফোন বা ইয়ারবাড সারাদিন লাগানো থাকে, তবে এর ফলে তৈরি ব্লকেজ এর কারণে ব্যাথা, শ্রবণে সমস্যা, ইনফেকশন ও অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
কাজ বা যোগাযোগের প্রয়োজনে যদি প্রতিদিন লম্বা সময় ধরে হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করতে হয়, তবে উল্লেখিত সকল সমস্যা অগ্রাহ্য করা ছাড়া উপায় থাকেনা। তবে কিছু হেডফোন বা ইয়ারফোন অন্য হেডফোন বা ইয়ারফোন থেকে দীর্ঘ সময় ব্যবহারে অধিক উপযোগী।
ওভার-ইয়ার হেডফোনগুলো সবদিক দিয়ে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে। এসব হেডফোন যেহেতু সরাসরি ইয়ার ক্যানেল টাচ করেনা, তাই ইনফেকশন এর সম্ভাবনা অনেকটা কম। তবে ভর বেশি হলে এসব হেডফোন লম্বা সময় ব্যবহারে ঘাড় ব্যাথা হতে পারে। এছাড়া আদ্রতা ও হিট সম্পর্কিত সমস্যা থেকেই যায়।
অন্যদিক ইন-ইয়ার হেডফোনগুলো অনেক হালকা ও বাইরে ব্যবহারের উপযোগী। তবে ইয়ার ক্যানেলের সাথে একদম লেপটে থাকে বলে এগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অন্য হেডফোন থেকে। জিম এর জন্য হেডফোন ব্যবহার করলে তা নিয়মিত পরিস্কার করুন।
অধিকাংশ ব্র্যান্ড লম্বা সময় ধরে ব্যবহারের উপযোগী ডিভাইস বাজারে আনলেও মনে রাখতে হবে গ্যাজেটের মত আপনার শরীরের ও বিরতির প্রয়োজন। তাই সম্ভব হলে লম্বা সময় ধরে ইয়ারফোন বা হেডফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। আর কোনো ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা এড়াতে দৈনিক ব্যবহারের অডিও ডিভাইসগুলো নিয়মিত পরিস্কার করতে ভুলবেন না।