চলতি বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় চাল উৎপাদন প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টন হতে পারে। এরপরও এ বছর ১ কোটি ৫ লাখ টন চাল, গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হবে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম আমদানি কঠিন হবে। দামও বেশি দিতে হতে পারে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির তথ্য জানিয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালের পর বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি ছিল গত মার্চ মাসে। এপ্রিল মাসেও খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। এতে বিশ্বের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ বিপদে পড়তে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও খাদ্যের দাম দ্রুত বাড়ছে বলেও এফএওর আরেকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দানাদার খাদ্য উৎপাদন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী আমন মৌসুমে ফসফেট সার আমদানি করতে গিয়ে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়তে পারে।
কারণ, বাংলাদেশ সাধারণত চাহিদার ৩০ শতাংশ ফসফেট সার রাশিয়া থেকে আমদানি করে। অন্যদিকে মোট গম আমদানির ৪০ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে হয়। এই দুই দেশ থেকে আপাতত ওই দুটি পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে অন্য দেশ থেকে এসব আনতে হবে, তবে সেখানেও দাম দ্রুত বাড়ছে।
এফএওর মহাপরিচালক চলতি মাসের শুরুতে এক বিবৃতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশ, মিসরসহ ছয়টি দেশ বেশি বিপদে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ধান–চাল সংগ্রহ এবং সার বিতরণে সরকার বিপুল পরিমাণে ভতুর্কি দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ভতুর্কির পরিমাণও বাড়াতে হচ্ছে। সার ও গমের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো বিকল্প বাজার থেকে আমদানি করা হবে। কৃষক কোনো সমস্যায় পড়বেন না।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৭ এপ্রিলের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি গুদামে খাদ্যের মজুদ রয়েছে ১৫ লাখ ৭৭ হাজার টন। গত দুই মাসের মধ্যে তা প্রায় পাঁচ লাখ টন কমেছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে চাল ও গম বিতরণ বাড়ানোর ফলে মজুদ কমেছে, আগামী দিনগুলোতে তা আরও কমবে। তবে এই মজুদ এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত মার্চ মাসে মোটা চালের কেজি ছিল ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা। যা গত বছরের তুলনায় দেড় শতাংশের বেশি।মাঝারি মানের চালের গড় দাম ছিল প্রায় ৬৬ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
এই দাম এর আগের যে কোনো বছরের তুলনায় বেশি।চালের দাম বেশি থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক বড় বড় কোম্পানি চালের ব্যবসা শুরু করেছে। তারা বিপুল পরিমাণে চাল মজুদ করায় দাম বেড়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ এম এম শওকত আলী বলেন, ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বের খাদ্যপণ্যের বাজারে প্রভাব ফেলবে তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। এখন গম ও সারের দাম যে হারে বেড়েছে, সামনে আরও বাড়তে পারে। ফলে বাংলাদেশ সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে বিকল্প বাজারের দিকে যেতে হবে। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।
ইউএসডিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশকে এ বছর ৭৫ লাখ টন গম, ২৩ লাখ টন ভুট্টা ও ৭ লাখ টন চাল আমদানি করা লাগতে পারে। চলতি বছর বাংলাদেশের মানুষের জন্য মোট ৩ কোটি ৭০ লাখ টন চাল দরকার হবে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ বেশি।করোনাকালে গম ও চাল খাওয়া বেড়েছে বলেও সংস্থাটি জানায়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের বিকল্প হিসেবে ভারত থেকেই পণ্যগুলো বাংলাদেশ আমদানি করবে বলে সংস্থাটি মনে করছে।