রাজধানীজুড়ে এডিস মশা বৃদ্ধিতে ডেঙ্গুর ভয়
রাজধানীজুড়ে মশার উৎপাতে থাকা দায়। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এডিস মশা বৃদ্ধিতে ডেঙ্গুর ভয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার বৃদ্ধিতে এবার ডেঙ্গু ভয়ানক হয়ে আসতে পারে। এমন অবস্থায় দুই সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি আরো উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
২৫ মার্চ থেকে গত শনিবার পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রায় ৪.২৫ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে গঠিত ২১টি দল রাজধানীর দুই হাজার ৫২০টি বাড়ি পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ১১৪টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
উত্তর সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, শুধু এডিস নয়, মশার উৎপাত বৃদ্ধি থামাতে নিয়মিত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হবে স্পেশাল অ্যাকশন। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, দক্ষিণে মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এডিস মশা বৃদ্ধির কারণে ১০টি জোনে করা হচ্ছে সচেতনতামূলক সভা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির ধরনেও পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে মশকবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়বে। যার কারণে মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াজাতীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্ত সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এডিস মশার জন্ম হয় জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে। এই মশার বংশবিস্তার ঠেকাতে সপ্তাহে অন্তত এক দিন বাড়ি এবং বাড়ির চারদিক দেখতে হবে। কোথাও কোনো পাত্রে পানি জমে আছে কি না; যদি থাকে, তাহলে তা ফেলে দিতে হবে বা পরিষ্কার করতে হবে।
যদি পাত্রটি এমন হয় যে পানি ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সেখানে ব্লিচিং পাউডার বা লবণ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাড়ির আঙ্গিনা বলতে শুধু বারান্দা বা নিকট জায়গা নয়। নিজের কক্ষের ভেতরের জিনিসগুলোর প্রতিও নজর রাখতে হবে। যেমন এসির পানি জমে আছে কি না, রুমের ভেতরে ফুলের টবে পানি জমল কি না—এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশা বাড়ার যে মাত্রা লক্ষ করা যাচ্ছে এটি সমস্যা সৃষ্টি করার আগে সচেতনতার সঙ্গে মোকাবেলা করা উচিত। গত বছরের তুলনায় এবার একই সময় এডিস মশা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত বেড়ে যায় তবে এডিসের বংশবিস্তার আরো দ্রুত বাড়বে। তাই এখনই এডিসের প্রজনন স্পটগুলো ধ্বংস করতে হবে। ’
গত সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মশার উৎপাত কমার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং মশার যন্ত্রণায় মশারির ভেতরেও নিরাপদে থাকতে পারছে না— এমনটাও জানিয়েছেন কেউ কেউ। হাজারীবাগ ট্যানারি মোড় শাহি মসজিদ গলির বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘বাসায় বলে রাখছি যাতে সন্ধ্যার আগে আগে দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়। তবু অনেক মশা। কয়েল, স্প্রে ব্যবহার করেও কাজ হয় না। ঘুমাতে গিয়ে মশারি দিলেও ভেতরে মশা থেকে যায়। ’
বর্তমানে রাজধানীর আজিমপুর, শহীদনগর, কামরাঙ্গীর চর, হাজারীবাগ, উত্তরার কয়েকটি সেক্টর, গোড়ান, জুরাইন, রায়েরবাগ, শ্যামপুর, মোহাম্মদপুরের বছিলা, মিরপুরের পল্লবীসহ আরো কিছু এলাকায় মশার উৎপাত বেশি। এসব এলাকাসহ রাজধানীজুড়েই চলতি মাসে এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিউলেক্স মশার সময়টা যেভাবে আমরা পার করতে পেরেছি, এডিস মশার বংশবিস্তার রোধেও আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। দক্ষিণে মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবু এডিসের সচেতনতায় এরই মধ্যে ১০টি অঞ্চলে আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করি এডিস বাড়তে পারবে না। ’ তিনি বলেন, তবে এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কিউলেক্স ঘরের বাইরে জন্মালেও এডিস কিন্তু ঘরের ভেতরেও জন্মায়। ’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিয়মিত কাজ চলছে। এডিস মশা বাড়তে পারবে না। আমাদের নিয়মিত কাজের মাধ্যমেই মশার উপদ্রব থামিয়ে দেওয়া সম্ভব। ’